উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বার্সেলোনা খেই হারাল আবারও। গতিময় ফুটবলে ঘরের মাঠে চমক দেখাল ক্লাব ব্রুজ। উজ্জীবিত ফুটবলে পাঁচবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বারবার এগিয়ে গেল তারা। তবে লামিনে ইয়ামালের নৈপুণ্যে কোনোমতে হার এড়াল হান্সি ফ্লিকের দল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বুধবার রাতে রোমাঞ্চকর ম্যাচটি শেষ হয়েছে ৩-৩ সমতায়।
শুরুতেই এগিয়ে যায় ব্রুজ, ফেররান তরেসের গোলে একটু পরেই সমতা ফেরায় বার্সেলোনা। সপ্তদশ মিনিটে আবার গোল হজমের পর লম্বা সময় পিছিয়ে থাকে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। দ্বিতীয়ার্ধে ইয়ামালের চমৎকার কারিকুরিতে সমতা ফেরায় তারা। দুই মিনিট বাদে ফের পিছিয়ে পড়ার পর, প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে হার এড়ায় বার্সেলোনা!
বার্সেলোনার একটি শট লাগে পোস্টে, দুটি ক্রসবারে। ভিএআর মনিটরে দেখে ব্রুজের একটি পেনাল্টি ও গোল বাতিল করেন রেফারি। ৭৮ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৩টি শট নেয় বার্সেলোনা, এর কেবল ৬টি থাকে লক্ষ্যে। অন্যদিকে ব্রুজের ১০ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে।
ঘরের মাঠে প্রথম ভালো সুযোগেই এগিয়ে যায় ব্রুজ। ষষ্ঠ মিনিটে কার্লোস ফোর্বসের ক্রসে নিকোলো ট্রেসোল্ডি খুঁজে নেন জাল। ঝাঁপ দিলেও বলের নাগাল পাননি বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি।
এক মিনিট পর প্রায় একইভাবে গোল করে সমতা ফেরায় বার্সেলোনা। ফের্মিন লোপেসের ক্রসে ছুটে গিয়ে বল জালে পাঠান ফেররান তরেস।
একাদশ মিনিটে লোপেসের বাঁকানো শট দূরের পোস্ট ছুঁয়ে বাইরে চলে যায়। ছয় মিনিট পর ফের এগিয়ে যায় ব্রুজ। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন অরক্ষিত ফোর্বস।
২৭তম মিনিটে একটুর জন্য গোল পাননি জুল কুন্দে। লামিনে ইয়ামালের কাছ থেকে বল পেয়ে গতিময় শট নেন ফরাসি ডিফেন্ডার। ক্রসবারে লেগে বল চলে যায় বাইরে।
ব্রুজের ডি বক্সের আশেপাশে প্রচুর খেলোয়াড় থাকায় শট নেওয়ার জায়গা পাচ্ছিলেন না বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। গোলরক্ষককে চমকে দিতে খেলোয়াড়দের পায়ের ফাঁক দিয়ে কাছের পোস্টে শট নেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। তৎপর গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন বল।
৪৫তম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে গোলের দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তরেস। ইয়ামালের চমৎকার থ্রু বলে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। গোলরক্ষক লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসায় তার কেবল শট লক্ষ্যে রাখতে পারলেই হতো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এক মিনিটের ব্যবধানে লোপেস ও ইয়ামালের দুটি শট কোনোমতে ঠেকিয়ে ব্যবধান ধরে রাখেন ব্রুজ গোলরক্ষক নুরদিন ইয়ার্কাস। ৫৯তম মিনিটে আবার ক্রসবারের বাধায় গোল পায়নি বার্সেলোনা। এরিক গার্সিয়ার গতিময় শট ক্রসবারে লেগে ফেরে।
পরের মিনিটে দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরান ইয়ামাল। ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে দুই জনকে কাটিয়ে দানি ওলমোকে বাড়িয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন এই ফরোয়ার্ড। ফিরতি পাস পেয়ে পায়ের কারিকুরিতে আরও দুই জনকে এড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জাল খুঁজে নেন ইয়ামাল।
৬২তম মিনিটে ব্রুজকে ফের এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নষ্ট করেন ফোর্বস। খুব কাছ থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই অবশ্য আবার দলকে এগিয়ে নেন তিনি। হান্স ফানাকেনের রক্ষণচেরা পাস পেয়ে অনেকটা দৌড়ে ডি বক্সে ঢুকে বাম দিকের পোস্ট ঘেঁষে জালে বল পাঠান পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
৬৯তম মিনিটে ইয়ামালের বাঁকানো শট দূরের পোস্টে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ব্রুজ গোলরক্ষক। পরের মিনিটে ব্রুজকে পেনাল্টি দিলেও পরে ভিএআর মনিটরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি। ৭৭তম মিনিটে সৌভাগ্যের গোলে তৃতীয়বারের মতো সমতা ফেরায় বার্সেলোনা।ইয়ামালের বলে মাথা ছুঁয়ে দেন খ্রিস্তোস জোলিস। একটু উঁচুতে উঠে দিক পাল্টে বল চলে যায় জালে!
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে স্ট্যান্সনির কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে জালে পাঠান রোমিও ভেরমন্ট। তবে ভিএআর মনিটরে দেখে ফাউল দেন রেফারি। স্লাইড করার সময় বার্সেলোনা গোলরক্ষককে ফাউল করেছিলেন ভেরমন্ট। বাকি সময় বল পায়ে রেখে কোনোমতে কাটিয়ে দিয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রুজ।
চার ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরে রয়েছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ২৪ নম্বরে আছে ব্রুজ। চার ম্যাচে টানা জয়ে যথাক্রমে প্রথম তিনটি স্থানে আছে বায়ার্ন মিউনিখ, আর্সেনাল ও ইন্টার মিলান।
এমআর