মানসিক চাপ কমাবে যেসব খাদ্য উপাদান

আমাদের সবার জীবনে কমবেশি মানসিক চাপ রয়েছে। স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অস্থান প্রভৃতি নানা কারণে প্রতিদিনই আমরা কমবেশি মানসিক চাপ মোকাবেলা করে থাকি।

মৃদু থেকে প্রচণ্ড মানসিক চাপে মাথাব্যথা, রাগ, হতাশা, অবসাদ, স্নায়বিক দুর্বলতা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম আর পুষ্টিকর খাবার আমাদের শরীরকে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস সহনশীল করে তোলে। তবে এমন কিছু খাদ্য উপাদান রয়েছে যা মানসিক চাপ মোকাবেলায় বিশেষভাবে কার্যকর।

চলুন জেনে নিই, মানসিক চাপ কমাতে পারে যেসব খাদ্য উপাদান-

মেলাটোনিন
নিদ্রাহীনতা মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। মেলাটোনিন এমন একটি উপাদান, যা আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের দেহে এই হরমোনটির পরিমাণ বাড়তে থাকে, ফলে রাতে আমাদের ঘুম পায়। দেহে মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে গেলে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়।

কাজু বাদাম, আখরোট, ব্রুকলি, টমেটো, জলপাই, সরিষা দানা প্রভৃতি মেলাটোনিনের প্রাকৃতিক উৎস।

অশ্বগন্ধা
বিশ্বের প্রাচীনতম ভেষজ ওষুধের মধ্যে একটি অশ্বগন্ধা (উইথানিয়া সোমনিফেরা)। একে আশ্চর্য ভেষজও বলা হয়ে থাকে। ভারতের বহু প্রাচীন গ্রন্থে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি ভারতীয় আয়ুর্বেদে বহু ব্যবহৃত একটি ভেষজ। অশ্বগন্ধা শারীরিক ও মানসিক চাপের জন্য, দেহের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর।

অশ্বগন্ধার স্ট্রেস-উপশমকারী প্রভাবগুলির উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে রক্তের কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন ২৩% পর্যন্ত হ্রাস হয়। উদ্বেগ ও স্ট্রেসের উপর অশ্বগন্ধার প্রভাব পরীক্ষা করে পাঁচটি সমীক্ষার পর্যালোচনাতে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করেছেন তাদের স্ট্রেস, উদ্বেগ ও ক্লান্তি তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর অশ্বগন্ধা পরীক্ষা করেও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

লি-থিয়ানিন
লি-থিয়ানিন একটি এমিনো অ্যাসিড, যা সাধারণত চা পাতায় পাওয়া যায়। এটি শরীর শিথিলকরণ এবং স্ট্রেস হ্রাস করার জন্য পরিচিত। প্রায় ৬৮,০০০ লোকের উপর চালানো পর্যালোচনাতে দেখা গেছে, গ্রিন টি পান করলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং উদ্বেগ হ্রাস হয়। তবে একে ক্যাফেইন ও লি-থিয়ানিনের যৌথ ক্রিয়া বলে ধরে নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায়, লি-থিয়ানিন নিজেই চাপ মুক্তিতে যথেষ্ট কার্যকর। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০ মিলিগ্রাম লি-থিয়ানিন গ্রহণ করার পর মানসিকভাবে চাপযুক্ত কাজ করার পরেও হৃদ স্পন্দন নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়াও এটি স্ট্রেস হরমোন বা করটিসলের স্তরকে হ্রাস করে।

ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স আট প্রকার ভিটামিন-বি এর সমন্বয়। এটি আমাদের গ্রহণ করা খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে মেটাবোলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শস্যদানা, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার প্রভৃতি এই ভিটামিনগুলোর প্রধান উৎস।

উচ্চমাত্রায় বি কমপ্লেক্সের ডোজ রক্তে অ্যামিনো অ্যাসিড হোমোসিস্টিনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপের বিভিন্ন উপসর্গ উপশম করে। এটি মেজাজ ভালো রাখেতে এবং দুর্বলতা দূর করতেও কাজ করে।

গ্লাইসিন
এটি একটি অ্যামিনো এসিড, যা দেহে প্রোটিন উৎপাদনের ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লাইসিন আমাদের মস্তিষ্ক শিথিল করে এবং দেহের তাপমাত্রা হ্রাস করে। ফলে রাতের ঘুম ভালো হয় এবং শরীর মানসিক চাপের ধকল সহ্য করতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে।

মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য প্রভৃতি গ্লাইসিনের প্রাকৃতিক উৎস। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: