পরনে নীল রঙের লিনেনের শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস ব্লাউজ। গলায় একটি মাত্র হার, হাতে সামান্য চুড়ি। চুল খোলা। সোফায় বসে ডান দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন এক তরুণী। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই নেট দুনিয়ায় রাতারাতি ঝড় তুলেছেন তিনি। নেটপাড়া মুগ্ধ হয়েছে তাঁর রূপে।
সামাজিক মাধ্যমে সদ্য ভাইরাল সেই তারকার নাম গিরিজা ওক। তবে শুধু ফেসবুকে নয়, বাস্তবেও তিনি তারকা, মরাঠি চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী, গিরিজা ওক। বলিউডেরও একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
কে এই গিরিজা? ১৯৮৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্ম গিরিজার। তাঁর বাবা গিরিশ ওক এক জন প্রবীণ মরাঠি অভিনেতা। মা পদ্মশ্রী ফাটক গৃহবধূ।
মুম্বইয়ের কান্দিবলী পূর্বের ঠাকুর কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স থেকে বায়োটেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন গিরিজা। পরে পড়াশোনা করেন বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট নিয়েও।
অভিনেতার পরিবারে জন্ম নেওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা জন্মেছিল গিরিজার। অল্প বয়স থেকেই থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন তিনি। অভিনয়ে পুরোপুরি পা রাখার আগে অনেক থিয়েটার কর্মশালাতেও যোগ দেন।
২০০৪ সালে, অর্থাৎ মাত্র ১৭ বছর বয়সে মরাঠি চলচ্চিত্রজগতে প্রথম পা দেন গিরিজা। পরের ছবি করেন ২০০৭ সালে। আমির খানের সঙ্গে অন্যতম হিট বলিউড ছবি ‘তারে জ়মিন পর’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি গিরিজাকে। বিগত দু’দশক ধরে একের পর এক হিন্দি এবং মরাঠি ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। কাজ করেছেন টেলিভিশনেও। গিরিজা অভিনীত জনপ্রিয় টেলিভিশন শোগুলির মধ্যে রয়েছে ‘সিআইডি’ এবং ‘লেডিজ় স্পেশ্যাল’।
মরাঠি এবং হিন্দি বিনোদন শিল্পে ভাল অভিনেত্রী হিসাবে পরিচিত গিরিজা। তিনি ‘গুলমোহর’, ‘লজ্জা’ এবং ‘নবরা মাজা ভাবরা’-সহ বেশ কয়েকটি মারাঠি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘হাউসফুল’ নামে একটি কন্নড় ছবিতেও অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী।
বলিউডে ‘তারে জ়মিন পর’ ছাড়াও ‘শোর ইন দ্য সিটি’ (২০১০) এবং শাহরুখ খানের হিট ছবি ‘জওয়ান’-এ অভিনয় করেছেন গিরিজা। অভিনয় করেছেন, ‘মডার্ন লাভ: মুম্বই’, ‘থার্টিন্থ: সাম লেসন্স আরন’ট টট ইন ক্লাসরুম’ এবং ‘ইনস্পেক্টর ঝেন্ডে’-র মতো বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ওটিটি সিনেমা এবং সিরিজেও।
২০১৮ সালে নবজ্যোত বন্দিওয়াড়েকর পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্যর ছবি ‘কোয়ার্টার’-এ অভিনয় করেন গিরিজা। আর সেই ছবিই অভিনেত্রীকে এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
‘কোয়ার্টার’ ছবিটি ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কোর্ট মেট্রেজ’ (স্বল্পদৈর্ঘ্যর ছবির বিভাগ) বিভাগে দেখানো হয়েছিল। পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘কোয়ার্টার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ওই বছর ‘ইউরোপিয়ান সিনেমাটোগ্রাফি’ পুরস্কারও পেয়েছিলেন গিরিজা। ‘ম্যাভেরিক মুভি’ পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিল।
২০১১ সালে মরাঠি চলচ্চিত্র নির্মাতা সুহৃদ গোডবোলেকে বিয়ে করেন গিরিজা। দম্পতির এক সন্তানও রয়েছে। সুহৃদ মরাঠি চলচ্চিত্র অভিনেতা, সংলাপ লেখক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীরঙ্গ গোডবোলের পুত্র।
‘দ্য লল্লনটপ’-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর থেকে সেই গিরিজাই এখন নেটাগরিকদের চর্চার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাঁকে নিয়ে আচমকা এত হইচই দেখে খুশি গিরিজাও।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে পাওয়া জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেছেন, ‘আমি মজা পাচ্ছি। ক্রমাগত ফোন বেজে চলেছে। নাটকের মহড়া চলছিল বলে ফোন ধরতে পারছিলাম না।’
গিরিজার কথায়, ‘আমি জানতাম না। হঠাৎ, আমার বন্ধুরা আমায় মেসেজ করা শুরু করে। তখন বুঝতে পারি। আমার দেওর জানাল কিছু সস্তা ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল আমার ছবিটি অন্য ভাবে ব্যবহার করছে। কিছু কিছু জায়গায় আমাকে যৌনতার প্রতীক হিসাবে দেখানো হচ্ছে। অনেকে আমাকে নতুন করে চিনলেও মরাঠি দর্শক আমায় অনেক বছর ধরে চেনেন।’
টিএম/টিএ