রসে টইটুম্বুর সফেদার যত গুণ

রসে টইটুম্বুর মজাদার ফল সফেদা। আমরা কম-বেশি সবাই এই ফলটাকে চিনি। রাস্তা-ঘাটে প্রায়শই এই ফলটি বিক্রি করতে দেখা যায়। অত্যন্ত পুষ্টিকর এই ফলে রয়েছে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি।

সফেদার ইংরেজি নাম Sapodilla এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Manilkara zapota। এর আদি নিবাস মেক্সিকোর দক্ষিণাংশ, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল। আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় কম-বেশি এই ফলটি উৎপন্ন হলেও খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম জেলায় বেশি সফেদার চাষ হয়।

তুলনামূলকভাবে সস্তা সফেদা অনেকে পছন্দ করে খেলেও এখনো এই ফলটি আঙুর, আপেল বা কমলার মতো কদর পায়নি। এর কারণও স্পষ্ট। সফেদার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। অথচ অন্য ফলগুলোর তুলনায় এর পুষ্টিগুণ কম নয়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য সফেদায় রয়েছে- ৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, পাঁচ দশমিক ছয় গ্রাম আঁশ, ১৯৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯ দশমিক ৯ গ্রাম চিনি, ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম লোহা, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও শূন্য দশমিক ১০ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। এ ছাড়া এতে ফোলেট, পাইরিডক্সিন, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে।

চলুন জেনে নেই, সফেদার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-

  • সফেদা একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল, তাই একে প্রাকৃতিক জোলাপ হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।
  • এতে পর্যাপ্ত খাদ্য আঁশ রয়েছে যা হজম বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আধাপাকা সফেদা জলে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়।
  • সফেদায় প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে, যা ক্ষয়কারক গ্যাস্ট্রিক, আন্ত্রিক প্রদাহ, পেট জ্বলা ইত্যাদি রোগের সমাধান করে।
  • সফেদা খেলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়। এছাড়াও সফেদায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি রয়েছে। নিয়মিত সফেদা খেলে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় ও দাঁত ভালো থাকে।
  • শরীরের কোষের ক্ষতিসাধন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সফেদা খেলে ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা কমে যায়। শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে এবং ফুসফুস ভালো রাখে।

  • ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে সফেদা সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ আছে। এটি চোখ, ত্বক ও হাড়ের জন্য খুব ভালো।
  • শরীরের ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত সফেদা খেতে পারেন। সফেদায় চর্বি থাকে না। তাই বেশি খেলেও শরীরে মেদ বাড়ার আশঙ্কা নেই।
  • সফেদার পুষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট কর্মজীবী মায়ের জন্য অনেক উপকারী। এটা গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা দূর করতে সাহায্য করে।
  • সফেদায় থাকা ডায়াটরি ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন আমাদের শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত সফেদা খেলে শারীরবৃত্তীয় কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়।
  • সফেদায় থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস হাড়ের গঠনকেও মজবুত করে।
  • হঠাৎ করে সর্দি, কাশি হলে ওষুধের বিকল্প হিসেবে সফেদা খেতে পারবেন।
  • সফেদায় আছে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ শক্তি দেয়। কাজেও আসে গতি।
  • সফেদা ফলের স্নায়ু শান্ত করার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে। তাই খেতে পারেন।
  • সফেদা একদিকে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে কোষের ক্ষয় পূরণ করে, অন্যদিকে নতুন কোষ তৈরিতে অংশ নেয়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা দেয়।
  • সফেদা বীজের চূর্ণ খেলে কিডনির রোগ ভালো হয় এবং এটা মূত্রাশয়ের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: