হোয়াইট হাউসে ‘ব্ল্যাক-টাই ডিনার’-এ দেখা গেল সুপারস্টার ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। গতকাল মঙ্গলবার রাতের এ আয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিমন্ত্রণে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন এই ফুটবল তারকা।
অনুষ্ঠানের আগে ট্রাম্প জানান, রোনালদোকে আতিথ্য জানানো তাঁর জন্য সম্মানের।
পর্তুগিজ ফুটবল তারকা রোনালদোর দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প অতিথিদের বলেন, ‘আমার ছেলে রোনালদোর অনেক বড় ফ্যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যারন (ট্রাম্পপুত্র) তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। আর আমার মনে হয় এজন্য এখন সে তার বাবাকে আরও একটু বেশি সম্মান করছে। শুধু আমি আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি বলেই।’
২০১৬ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখলেন রোনালদো। সে সময় একটি যৌন নির্যাতনের অভিযোগের মুখোমুখি হন তিনি। ক্যাথরিন মায়োরগা নামে এক নারী অভিযোগ করেন, রোনালদো ২০০৯ সালে লাস ভেগাসের একটি হোটেল কক্ষে তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করেন এই তারকা ফুটবলার।

২০১৮ সালে এক বিবৃতিতে রোনালদো বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো জোরালোভাবে অস্বীকার করছি। ধর্ষণ একটি নিকৃষ্ট অপরাধ, যা আমার সত্তা ও বিশ্বাসের পরিপন্থী।’
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরেরা জানান, অভিযোগ প্রমাণের যথেষ্ট ভিত্তি না থাকায় রোনালদোর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে না।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে সৌদি প্রো লিগের মুখপাত্র ও আল নাসর ক্লাবের অধিনায়ক হিসেবে সৌদি আরবে পাড়ি জমান রোনালদো। ক্লাবটি সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (পিআইএফ)–এর মালিকানাধীন, যার চেয়ারম্যান যুবরাজ নিজেই।
সৌদি ফুটবল লিগে রোনালদোর উজ্জ্বল পারফরম্যান্স তাঁকে দেশটির আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার অন্যতম মুখপাত্রে পরিণত করেছে।
নৈশভোজের আগের দিনই জানা গিয়েছিল এই আয়োজনে থাকছেন রোনালদো। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন কি না তা জানাননি।
সৌদি যুবরাজ দেশের আয়ের প্রধান উৎস তেলনির্ভরতা কমাতে খেলাধুলা ও পর্যটনসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। অনেক সমালোচক দাবি করেন, সৌদির এসব বিনিয়োগ মূলত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৈধতা অর্জন এবং দেশের মানবাধিকার রেকর্ড ও তেলশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল, যা ‘স্পোর্টসওয়াশিং’ নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, আধুনিকায়নের লক্ষ্য সামনে রেখে ক্রীড়া ও পর্যটন খাতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে সৌদি আরব বহু আলোচিত ইভেন্ট ও ব্যক্তিত্বের ওপর বিপুল বিনিয়োগ করছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে রোনালদোর বেতনচুক্তি ছিল অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁকে বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ দৈনিক পাঁচ লাখ ডলারেরও বেশি দেওয়া হতো।
এই বছরের জুনে তিনি নতুন দুই বছরের চুক্তিতে সই করেন, যার মোট মূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, তিনি এখন প্রথম বিলিয়নিয়ার ফুটবলার, যার মোট সম্পদের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ডলার। ৪০ বছর বয়সী এক ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে এটি নিঃসন্দেহে বিশাল অঙ্ক।
রোনালদো সম্প্রতি সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘আমাদের বস’ বলে অভিহিত করেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে রোনালদো রিয়াদে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রশংসা করেন এবং ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ সৌদি আরবে আয়োজনের প্রত্যাশার কথা জানান ।
কেএন/টিএ