বিএনপি পাঁচটি জরুরি বিষয় অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নিজের জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমান লেখেন, এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ডিজিটাল দুনিয়া আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে বদলে দিচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পরিসরে রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কেও এর প্রভাব স্পষ্ট। প্রযুক্তি যে গতিতে পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে, তা আমরা কেউই উপেক্ষা করতে পারি না।বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
তিনি বলেন, কখনো কখনো আমি এবং আমার স্ত্রী ভাবি, যে পৃথিবীতে আমরা বড় হয়েছি, তার তুলনায় আমাদের মেয়ের জন্য আজকের পৃথিবী কত আলাদা। আর অনেক অভিভাবকের মতো আমাদের মাঝেও জন্ম নেয় আশা ও উদ্বেগ দুটোই। সুযোগ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, কিন্তু হুমকিও ঠিক ততটাই বেড়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ যদি সামনে এগোতে চায়, তাহলে আমাদের কন্যা, মা, বোন এবং সহকর্মীদের আর ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না। প্রতিদিন অসংখ্য নারী শুধু কথা বলা, কাজ করা, পড়াশোনা করা বা স্বাধীনভাবে বাঁচার চেষ্টা করার জন্য হয়রানি, ভয়ভীতি, হুমকি, বিদ্বেষ, বুলিং এবং সহিংসতার মুখোমুখি হন। এটা সেই বাংলাদেশ নয়, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি। আর এটা আমাদের কন্যাদের প্রাপ্য ভবিষ্যৎও নয়।
তিনি বলেন, নারীরা অবশ্যই নিরাপদ অনুভব করবেন অনলাইনে বা অফলাইনে, ঘরে বা বাইরে, ব্যক্তিগত জীবনে বা কর্মক্ষেত্র- সব ক্ষেত্রেই। এ বাস্তবতা নিশ্চিত করতে বিএনপি যে পাঁচটি জরুরি বিষয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে চায় তা হলো:
১. জাতীয় অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নারীদের জন্য দ্রুত, সহজ উপায়ে সাইবারবুলিং, হুমকি, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস ইত্যাদি অভিযোগ জানানোর সুযোগ তৈরি করা। ২৪/৭ হটলাইন, অনলাইন পোর্টাল এবং প্রশিক্ষিত প্রতিক্রিয়াদাতারা দ্রুত ও সম্মানের সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন। বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট মডারেশন উন্নত করা হবে, যাতে আপত্তিকর কনটেন্ট দ্রুত সরানো যায়।
২. নারীদের জন্য সুরক্ষা প্রোটোকল
সাংবাদিক, কর্মী, শিক্ষার্থী বা কমিউনিটি নেত্রী হিসেবে যারা হামলা বা হয়রানির মুখোমুখি হন, তাদের জন্য স্পষ্ট জাতীয় নির্দেশিকা, দ্রুত আইনি ও ডিজিটাল সহায়তা এবং গোপন রিপোর্টিং চ্যানেল। জনজীবনে অংশগ্রহণের কারণে কোনো নারীকে আর নীরব হতে হবে না।
৩. ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা
স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টেশনের সময় থেকেই বাস্তবভিত্তিক ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা দেওয়া। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা থাকবেন ‘সেফটি ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে। বার্ষিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন তরুণদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডিজিটাল দুনিয়া ব্যবহারে সহায়তা করবে।
৪. সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে কমিউনিটি পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া
কমিউনিটি হেল্প ডেস্ক, নিরাপদ গণপরিবহন রুট, উন্নত রাস্তার আলো এবং ট্রমা-সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াদাতারা নারীদের প্রতিদিনের জীবনকে আরও নিরাপদ ও পূর্বানুমানযোগ্য করে তুলতে পারে।
৫. নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জাতীয় উদ্যোগ
নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ, মেন্টরিং নেটওয়ার্ক এবং স্কুল, অফিস ও কর্মক্ষেত্রে শিশু যত্ন সুবিধা বাড়িয়ে নারীদের নেতৃত্ব দেওয়া, অর্জন করা এবং পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করা। নারীরা এগোলে, দেশও এগোয়।
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি, ধর্ম, জাতিসত্তা বা লিঙ্গ—যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ হিসেবে আমাদের একটি সত্যে এক হতে হবে, তা হলো নারীরা নিরাপদ, সমর্থিত ও ক্ষমতায়িত হলে বাংলাদেশকে আর থামিয়ে রাখা যাবে না। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের কন্যাদের জন্য, আর আগামী প্রজন্মের জন্য সেই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি।
এমকে/এসএন