মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমা ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরলান্ডো হার্নান্দেজ। মাদক-সংশ্লিষ্ট মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমা ঘোষণার পর তিনি মুক্তি পেয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিদের অনলাইন নথিতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরলান্ডো হার্নান্দেজ যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
নথিতে দেখা গেছে, সোমবার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত ইউএসপি হ্যাজেলটন কারাগার থেকে মুক্তি পান হার্নান্দেজ। গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন আমদানির ষড়যন্ত্র ও মেশিনগান রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হার্নান্দেজ। পরে মামলার শুনানি শেষে তাকে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, হার্নান্দেজের সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর ও অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে হার্নান্দেজের স্ত্রী আনা গার্সিয়া দে হার্নান্দেজ ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার স্বামী এখন স্বাধীন মানুষ।
হন্ডুরাসের ন্যাশনাল পার্টির সদস্য হার্নান্দেজ ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করে হন্ডুরাসের সরকার। সহিংস মাদকপাচার চক্র পরিচালনা ও শত শত টন কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে সহায়তা করেছেন বলে সেই সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
নিউইয়র্কে বিচার চলাকালীন হুয়ান অরলান্ডো হার্নান্দেজের প্রসিকিউটররা বলেন, হার্নান্দেজ দেশকে মাদক-রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা করেছেন এবং মাদক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়ে সুরক্ষা দিয়েছেন।
এই মামলায় ৪৫ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাকে ৮০ লাখ ডলার জরিমানাও করেন। রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানের বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে তদন্ত ছিল বাইডেন প্রশাসনের সাজানো নাটক।
ট্রাম্প বলেন, তারা মূলত বলেছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী। কারণ তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। হার্নান্দেজের মুক্তি এমন সময় ঘটছে যখন হন্ডুরাসে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কৌশলগত দিক থেকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত ডানপন্থী প্রার্থী নাস্রি আসফুরা ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যপন্থী দলের প্রার্থী সাবেক টিভি উপস্থাপক সালভাদর নাসরালার মধ্যে মাত্র ৫১৫ ভোটের ব্যবধান ছিল।
শুক্রবার নাসরালার সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, তিনি কাছাকাছি একজন কমিউনিস্ট। অন্যদিকে, আসফুরাকে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য আসফুরাকে প্রশংসা করেন। গত কয়েক মাস ধরে মাদুরোর সঙ্গে ট্রাম্পের কথার লড়াই চলছে।
নাসরালা বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, ভেনেজুয়েলার গত বছরের পুনর্নির্বাচনকে বহু দেশ অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা মাদুরো দেশটির একটি মাদকচক্রের নেতৃত্বে আছেন।
২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সিওমারা কাস্ত্রোর নেতৃত্বে পরিচালিত হন্ডুরাস এখন কিউবা ও ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে।
ইউটি/টিএ