ইন্টারনেটে তথ্যভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বলতে বিশ্বজুড়ে প্রথমেই উচ্চারিত হয় উইকিপিডিয়ার নাম। এই জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের ‘উদারপন্থী’ প্রবণতা নিয়ে ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাইট গ্রোকিপিডিয়া।
উদ্দেশ্য ছিল উদারপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং বিকল্প একটি ‘নিরপেক্ষ’ তথ্যভান্ডার তৈরি করা। প্রতিষ্ঠাতাদের দাবি ছিল, মূলধারার তথ্যে যেসব পক্ষপাত রয়েছে, সেগুলোকে সরিয়ে “সত্যের ওপর ভিত্তি করে” নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পই এখন নিজের ভেতরের বিবাদ, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব আর অব্যবস্থাপনার কারণে চরম বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গ্রোকিপিডিয়া এমন এক অবস্থায় উপনীত হয়েছে যেখানে পক্ষপাত দূর করার প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে নিজেই আরও বড় পক্ষপাত, বিভক্তি এবং ভুল তথ্যের উৎসে পরিণত হয়েছে।
গ্রোকিপিডিয়ার প্রথম দিককার লক্ষ্য ছিল অল্পসংখ্যক সম্পাদককে নিয়ে স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তথ্যসংগ্রহ ও যাচাই করা। কিন্তু যারা প্ল্যাটফর্মটিকে জনপ্রিয় করেছিলেন, তাদেরই অনেকে এখন অভিযোগ করছেন, একদল উগ্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাইটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তারা নিজেদের মতাদর্শ ছাড়া অন্য কোনো মত প্রকাশ করতে দিচ্ছেন না।
সম্প্রতি গ্রোকিপিডিয়ার ভেতরে সম্পাদক নিয়োগ ও নিবন্ধ অনুমোদন নিয়ে কয়েক দফা বড় ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। বিশৃঙ্খলা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত তথ্যের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, যেসব নিবন্ধে নিরপেক্ষতার দাবি করা হয় তাতে প্রায়ই একপেশে মন্তব্য, অসমর্থিত বিশ্লেষণ ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। মূলধারার উৎস যাচাইয়ের মানদণ্ডও দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে পাঠকদের একাংশ মনে করছেন গ্রোকিপিডিয়া এখন তথ্যের ভরসাস্থল নয়।
তবে গ্রোকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতাদের দাবি, এখনো প্ল্যাটফর্মটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। তারা বলছেন, এটি এখনো বিকল্প তথ্যের জায়গা হতে পারে। যদি সম্পাদনা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয় এবং সবপক্ষের মতের জন্য সমান সুযোগ রাখা যায়। কিন্তু বাস্তবে সাইটটির ভেতরের বিভাজন এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান।
ডিজিটাল তথ্যযুদ্ধের এই সময়ে নিরপেক্ষ জ্ঞানভান্ডার তৈরি করা সত্যিই কঠিন কাজ। গ্রোকিপিডিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখাচ্ছে, কেবল অন্যকে দোষারোপ করে বা ‘বিকল্প সত্য’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্ল্যাটফর্ম গড়া যায় না।
ঠিক সেসব জায়গাতেই গ্রোকিপিডিয়া এখন সবচেয়ে পিছিয়ে। যে প্ল্যাটফর্ম একসময় নিজেকে উদারপন্থার ‘বিকল্প’ হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেটিই এখন নিজের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত।
আইকে/এসএন