ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাঙা হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ। উত্তাল হয়েছিল গোটা ভারতবর্ষ। ৩৩ বছর পর, আরও একটা ৬ ডিসেম্বরে ফের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তেজনার ঘনঘটা।
শনিবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে 'বাবরি মসজিদ'-এর শিল্যান্যাস করার সিদ্ধান্তে অনড় ভরতপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেই অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আমীর মাওলানাসহ লক্ষাধিক মুসল্লিগণ। এই মহতী বাবরি মসজিদের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আগত হাজার হাজার মানুষকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রায় ৪০ হাজার মানুষের খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন হুমায়ুন কবীর।
তিনি ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, পুলিশের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। তার ধারণা, শনিবার মোরাদিঘির কাছে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ২৫ বিঘা জমিতে জড়ো হবেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাজ্য থেকে ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় নেতারাও আসছেন।
তিনি জানিয়েছেন, সৌদি আরব থেকে দুই জন কাজী সকালেই কলকাতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকেই একটি বিশেষ কনভয়ে পৌঁছবেন মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে। ইতোমধ্যেই বাবরি মসজিদ নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা রেজিনগরের সভাস্থলে পৌঁছে হুমায়ুন কবীর গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করেন।
এদিন তিনি বলেন, শুধুমাত্র তিন কাঠা জায়গার উপরে, এত বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা আজকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করছি। ২৫ বিঘা জায়গার মধ্যে, হাসপাতাল হবে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে, পার্ক হবে। পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে যত কোটি টাকা খরচ হয়, মুর্শিদাবাদসহ মালদা, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, প্রচুর মানুষ আর্থিক সহযোগিতা করবেন।
রাজ্য সরকারের টাকা এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করবেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, এতে মসজিদের 'পবিত্রতা' নষ্ট হবে।
এটা আমি কোনওমতেই গ্রহণ করব না। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ মসজিদ নির্মাণের জন্য যে যার সামর্থ্য মত নতুন ইট, পাথর ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছেন পবিত্র মসজিদ ময়দানে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আনা ইট,কাঠ,পাথরসহ সমস্ত সরঞ্জাম একত্রিত করে মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হবে। ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় নামাজ আদায় করার পর জনসভা শুরু হয়,এরপর বিকাল ৩টায় ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল বাবরি মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
অন্য দিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ধর্মতলা চত্বরের মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশ থেকে শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ একটি সম্প্রীতি যাত্রার সূচনা করেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কয়েক হাজার মানুষ সেই সম্প্রীতি মিছিলে অংশ নেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি চক্রান্ত করে বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন লাগাতে চাইছে। জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মানুষকে বিজেপির সেই অপচেষ্টাকে রুখতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিজেপির ধর্ম নিয়ে রাজনীতির তাস খেলা এবার বন্ধ হবে। বাংলায় কোনোরকম ধর্মীয় জিগির তুলে দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে দেয়া হবে না। রাজ্য সরকার রাজ্য বাসীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
এমকে/টিকে