আজ ৭ ডিসেম্বর, গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত হয়। দিনটি গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গৌরবের দিন।
এই দিনে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে-দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন। হাতে তাদের রাইফেল ও বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত রক্তলাল সূর্য সম্বলিত গাঢ় সবুজ জমিনের পতাকা। মুখে বিজয়ের হাসি। আজ আর শহরে হানাদার বাহিনী নেই। আজ এ শহর মুক্ত।আজ এ শহর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের দখলে।
প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বীকৃতি প্রদান করায় হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা গোপালগঞ্জ সদর থানা পরিষদ সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়।
মেজর সেলিমের অধীনে হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকা ও অন্য একটি দল কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ার ওয়্যারলেস ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ দিন তাই পরম পাওয়ার একটি দিন। শত দুঃখ-কষ্ট ও আত্মত্যাগের পর বিজয়ের আনন্দঘন এক মুহূর্ত। পাক সেনারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে আর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে আসছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিকামী জনতার মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে শহরের মুক্তিকামী মানুষ বেরিয়ে আসেন। সূর্যোদয়ের মতো আভা ছড়িয়ে বিস্তৃত করেছিল দিগন্ত। শহরবাসী মেতে উঠেছিল অসীম আনন্দ উৎসবে।
বর্তমানের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ভবনকে একাত্তরের ৫ মে পাক সেনারা মিনি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করে। তার আগে ৩০ এপ্রিল শহর ও বিভিন্ন এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পাকবাহিনী। এই মিনি ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। এখানে ৩৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে।
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন সদর উপজেলার মেরী গোপিনাথপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক এর ছেলে শহীদ মোস্তাফিজুর রহমান, টুঙ্গীপাড়া উপজেলার বাশুড়িয়া গ্রামের জহরুল হক মোল্লার দুই ছেলে শহীদ আশরাফ আলী মোল্লা ও শহীদ শেহাব মোল্লা, ইউসুফ মোল্লার ছেলে শহীদ আবুল হাসেম, মুনসুর আলী চৌধুরীর ছেলে মাহবুবুর রহমান (চান মিয়া চৌধুরী), আহম্মদ চৌধুরীর ছেলে শহীদ গোলজার চৌধুরী, মানিহার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজ্জাক মোল্লার ছেলে শহীদ হারুন-আর-রশিদ মোল্লা, মালেক সরদারের ছেলে শহীদ আছাদ সরদার,জব্বার শেখের ছেলে শহীদ মোসলেম শেখ, মোজাম মোল্লার ছেলে শহীদ বালা মোল্লা। নুরুল হকের ছেলে শহীদ আ. মান্নান খালাসীসহ আরও অনেকে।
কেএন/টিকে