ভালো বিতর্কই সুস্থ গণতন্ত্রের ভিত্তি: প্রেসসচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘ভালো বিতর্কই একটি সুস্থ গণতন্ত্রের ভিত্তি। ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং অন্যকে হেয় করে ভাষা ব্যবহার কেবল অসহিষ্ণুতাকেই প্রকাশ করে।’ আজ রবিবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসসচিব বলেন, ‘ফুলবাড়ীর হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথম বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে সম্ভবত আমিই প্রকাশ করেছিলাম। এখনো মনে আছে, আন্দোলনকারীরা নিহত হয়েছে; এ কথা পুলিশকে স্বীকার করাতে কতটা চাপ সামলাতে হয়েছিল। তখন আমি ঢাকায় এএফপির সংবাদদাতা ছিলাম। এই প্রতিবেদনটি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়, কারণ প্রকল্পটির প্রাথমিক অনুমতি পাওয়া এশিয়ান এনার্জি কম্পানিটি লন্ডনে তালিকাভুক্ত ছিল। তখন আমি এসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছিলাম, আজও করছি।

বহু বছর ধরে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীরা আন্দোলন দমনে ট্রিগার-হ্যাপি হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতার চক্র ভাঙতে কঠোর পরিশ্রম করছে।’তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ১৬ মাস কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ফুলবাড়ী উন্মুক্ত খনন প্রকল্প নিয়ে আমার সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত পোস্টটি এসেছে। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ, কিন্তু আমাদের আন্দোলনগুলো প্রায়ই এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে।

আমি যদি এখনো এএফপিতে কাজ করতাম, তাহলে সম্ভবত আমি এখন যে অবস্থান নিয়েছি, সেটির তীব্র সমালোচনা করতাম।’ শফিকুল আলম বলেন, ‘একটি দেশের অগ্রগতির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অপরিহার্য, সরকারে যোগ দেওয়ার পর বিষয়টি আমার কাছে আরো স্পষ্ট হয়েছে। পৃথিবীর এক প্রান্তের সংঘাত অন্য প্রান্তে এলএনজি ও তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমাদের স্বাভাবিক দামের পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি দামে এলএনজি কিনতে হয়েছে। ওই দামে এলএনজি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তখন আমাদের সামনে একমাত্র পথ থাকে; রিজার্ভ শেষ করে এলএনজি কেনা, না হয় মাসের পর মাস কারখানা বন্ধ রাখা।’



‘গত দুদিন আমার লেখার বিষয়ে যে গঠনমূলক সমালোচনা এসেছে, আমি তা স্বাগত জানাই। মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে আমার যুক্তির দুর্বল জায়গাগুলো তুলে ধরেছেন। ফুলবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তাদের কঠোর পরিশ্রম ও বিশ্লেষণের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবুও আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বড় কয়লা মজুত ফুলবাড়ী, দিঘীপাড়া ও জামালগঞ্জ থেকে কয়লা না তোলায় আমরা একটি বড় ভুল করেছি। যদি এশিয়ান এনার্জির চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের উচিত ছিল সেসব ত্রুটি সংশোধন করে নতুন অংশীদার খোঁজা যেমন বিহেপি বিলিটন বা রিও টিন্টো। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬০০–৭০০ ডলার। আমরা তখন খুবই দরিদ্র ছিলাম। ফুলবাড়ীর আন্দোলন আমাদের কয়লা তোলার আকাঙ্ক্ষার শেষ করেনি। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা বড় মাত্রার কয়লা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কিছু সমালোচক হয়তো খেয়াল করেননি, আমি পোস্টটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ক্ষমতায় লেখেছি। আমার মতামত কোনো সরকারি নীতির প্রতিফলন নয়। আমার জানামতে, এই সরকারের ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার পোস্টটি ছিল কেবল একটি ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি সবসময় বামপন্থীদের মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করেছি। এএফপিতে কাজ করার সময় আমি এ ধরনের আন্দোলনে অনেকবার অংশ নিয়েছি। তাদের এই আবেগ ও আন্তরিকতা অমূল্য।’

‘তবে অনেক অর্থনৈতিক বিষয়ে আমি মনে করি, বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই ভুল পথে ছিলেন। তাদের আন্দোলন সবসময় বাস্তবসম্মত ফল বয়ে আনেনি। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন অনেক ক্ষেত্রে ‘লাডাইট’ মানসিকতার কাছাকাছি। ইতিহাস বলছে, শ্রমজীবী মানুষের জন্যও তারা খুব একটা সফল হতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যেমন গার্মেন্টসে শিশুশ্রম বন্ধ, নিরাপত্তা মান উন্নয়ন, এবং শ্রমিকদের নানা সুযোগ সুবিধা এগুলো এসেছে মূলত পশ্চিমা ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর চাপ থেকে, আমাদের বামপন্থী আন্দোলন থেকে নয়।’

এসএস/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই শুরু হয় সবকিছু: যিশু সেনগুপ্ত Dec 07, 2025
img
জনগণ ও গণতন্ত্রই কেবল দেশের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে: তারেক রহমান Dec 07, 2025
img
ঢাকা বোর্ডে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণদের বৃত্তির তালিকা প্রকাশ Dec 07, 2025
img
রাজশাহীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৬ Dec 07, 2025
img
গণতন্ত্রের সর্বনাশ ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার : সালাহউদ্দিন Dec 07, 2025
img
‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন জোট ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম Dec 07, 2025
img
শুধু পাসের হার বৃদ্ধি যেনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য না হয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img
কাজ হারানোর ভয়ে ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী ক্যাটরিনা! Dec 07, 2025
img
পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ Dec 07, 2025
img
স্মৃতির সঙ্গে বিয়ে ভাঙার পরই আইনি ব্যবস্থার হুমকি পলাশের Dec 07, 2025
ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী বদলাচ্ছে জামায়াত Dec 07, 2025
img
২ সিনেমা নিয়ে পর্দায় ফিরছেন অভিনেত্রী তানজিকা! Dec 07, 2025
img
১৯৯ কোটি টাকায় বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এস আলমের মাসুদসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা Dec 07, 2025
img
দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন যুবদল নেতা Dec 07, 2025
img
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগদানের বয়সসীমা বৃদ্ধি Dec 07, 2025
পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ছাড়াল ২ লাখ ২৪ হাজার Dec 07, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন সিইসিসহ ৪ কমিশনার Dec 07, 2025
img
প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তাদেরও লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে: স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img
বেনিনের ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্টকে অপসারণ Dec 07, 2025