মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা

মিরপুরে ১৫ জনকে হত্যার নির্দেশদাতা সালমান ও আনিসুল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেকমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মিরপুর এলাকায় মোট ১৫ জনকে হত্যার নির্দেশদাতা এবং অসংখ্য লোককে গুরুতর জখম করে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবে কারফিউ জারি করে আন্দোলনকারীদের ‘শেষ করে দেওয়ার’ পরামর্শদানসহ বিভিন্ন নির্দেশনায় তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকার প্রমাণ রয়েছে।

নির্ধারিত দিনে অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের বিষয়ে আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশ দেবেন।

ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ দুজনের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে উসকানি, সহযোগিতা ও পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে আজ শুনানি ও আদেশের জন্য রয়েছে। আজ সকালে কারাগার থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

টিকে থাকার মরিয়া প্রয়াস হিসেবে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য। আসামিরা উসকানি/প্ররোচনা/সহায়তা/সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা ল্যাথান উইপেন ব্যবহার করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ডিএমপি এর মিরপুর ০২ নং, ১০ নং গোলচত্তরে, ১৩ নং জুটপট্টিসহ আশপাশ এলাকায় আল আমিন, মাহফুজ আলম, সুজন মাহমুদ, আশরাফুল, মমিন ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, মেহেরুন্নেছা, মতিউর রহমান, রনি, শাহদাত হোসেন, রুবেল তাহমিদ, ফজলু, মামুন মিয়া, মোঃ আনোয়ার হোসেনকে (মোট ১৫ জন) জনকে হত্যা করে এবং অসংখ্য লোককে গুরুতর জখম করে নির্যাতন চালায়।

আসামিরা হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন বন্ধে কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বা হত্যা ও নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে কোন শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বরং উক্তরুপ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থেকেছেন। ফলে দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ৩ (২) (এ), (জি), (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ৪ (৩) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা একই আইনের ২০ (২), ২০এ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

যেহেতু ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি আসামি শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আসামী সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠন ও ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এবং তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবে দেশব্যাপী নিরস্ত্র মানুষের উপর আক্রমণের মাধ্যমে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে তা দেশী-বিদেশি পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমসহ ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং হচ্ছে যা বাংলাদেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সর্বজনবিদিত।

তদুপরি উক্ত অপরাধ সমূহ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক অনুসন্ধানে প্রমাণিত। উপরোক্ত অপরাধ সমূহ কমন নলেজ জুডিশিয়াল নোটিশ হিসেবে গ্রহণ করার এখতিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ১৯ (৩) ধারার অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, যেহেতু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠন ও ১৪ দলীয় জোট দলীয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপরে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাদেরকে (ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন) অপরাধী সংগঠন হিসেবে গণ্য করার শামিল।

যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন, দালিলিক ও মৌখিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লব চলাকালে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ যা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল্‌ল্স) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ৩(২) (এ), (জি), (এইচ), ৪ (১) আসামি আনিসুল হকের প্ররোচনায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে সংগঠিত বৈষম্যবিরোধী ও একদফা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা ২৮৬ টি মামালায় ৪ লাখের বেশি আসামি করা হয়েছে। আর আসামি সালমান এফ রহমান গণ ভবনে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বলছে জীবন দিয়ে হলেও শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে। শেখ রেহানার সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে।

২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পুলিশ সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে আটক করে। পরে বিভিন্ন মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার নথিপত্র আদালতে উপস্থাপনের পর পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

আইকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভিন্নধর্মের কাউকে বিয়ে করলেই সমস্যা কেন, সমালোচনায় ক্ষুব্ধ সোনাক্ষী Dec 08, 2025
img
রোনালদোর একাধিক রেকর্ড কেড়ে নিতে যাচ্ছেন এমবাপ্পে Dec 08, 2025
img
ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের কাছে দোয়া চাইলেন তাসকিন Dec 08, 2025
img
সরকারি পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না কেউ : ইসি Dec 08, 2025
img
এক অপ্রীতিকর ঘটনায় বদলে যায় আয়শা ঝুলকার ক্যারিয়ার! Dec 08, 2025
img
আজ পিরোজপুর হানাদারমুক্তর দিন Dec 08, 2025
img
বলিউড সিনেমায় অক্ষয়-সাইফের সঙ্গে যিশু Dec 08, 2025
img
মেহেদিরাঙা হাতের ছবির রহস্য দূর করলেন কনা! Dec 08, 2025
img
কীভাবে ফুসফুসের ক্যানসার জয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত? Dec 08, 2025
img

বিএনপিতে যোগ দিয়ে বললেন আ.লীগের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

‘আওয়ামী লীগ গেছেগা পলাইয়া, আমি কি করুম?’ Dec 08, 2025
img
রাতভর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থানের ঘোষণা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের Dec 08, 2025
img
ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় সোমবার মদিনার সব স্কুলে সশরীরে ক্লাস বন্ধ Dec 08, 2025
img
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক আফসানা মিমি Dec 08, 2025
img
রাজবাড়ী জেলার ৫ থানায় নতুন ওসির যোগদান Dec 08, 2025
img
চিড়িয়াখানা বন্ধ হোক: আরশ খান Dec 08, 2025
img
জোড়া ধামাকায় বছর শেষে পর্দায় ফিরছেন তানজিকা Dec 08, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে : বুলবুল Dec 08, 2025
img
এক সপ্তাহে ১১ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ফেরত পাঠাল সৌদি Dec 08, 2025
img
নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজের সঙ্গে কোনো আপস করবো না: মির্জা আব্বাস Dec 08, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলে খুশি রাশিয়া, নারাজ ইউরোপ Dec 08, 2025