হলিউডে ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণ নিয়ে প্রতিযোগিতা হঠাৎ নাটকীয় মোড় নিয়েছে। এতদিন স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের ৭২ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবকেই সবচেয়ে সম্ভাব্য মনে করা হচ্ছিল এবং ধরে নেওয়া হয়েছিল অধিগ্রহণ কার্যত নিশ্চিত!
কিন্তু সোমবার আকস্মিকভাবে প্যারামাউন্ট সব হিসেব পাল্টে দিলো। ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণে তারা ১০৮.৪ বিলিয়ন ডলারের ‘শত্রুভাবাপন্ন’ বা হস্টাইল প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত! আর তাতেই পাল্টে গেল পুরো চিত্র!
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যারামাউন্ট সরাসরি ‘ওয়ার্নার ব্রাদার্স’-এর শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে এই বিশাল প্রস্তাব দিয়েছে! এই প্রস্তাবের অর্থায়নে রয়েছে জ্যারেড কুশনারের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যাফিনিটি পার্টনার্স, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল এবং এলিসন পরিবার।
প্যারামাউন্টের এই পদক্ষেপকে বিনিয়োগ ও মিডিয়া শিল্পে বড়সড় চমক হিসেবে দেখা হচ্ছে! তবে ওয়ার্নার ব্রাদার্স বোর্ড জানিয়েছে, তারা প্যারামাউন্টের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করবে, তবে এখনই নেটফ্লিক্সের সঙ্গে চলমান আলোচনার পক্ষে তাদের সুপারিশ পরিবর্তন করছে না এবং শেয়ারহোল্ডারদের নতুন প্রস্তাব নিয়ে তাড়াহুড়া না করতে পরামর্শ দিয়েছে।
‘ওয়ার্নার ব্রাদার্স’-এর এই অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও নেটফ্লিক্সের দিকেই সমর্থন যোগাচ্ছে, কিন্তু প্যারামাউন্টের লোভনীয় উচ্চমূল্যের প্রস্তাব বাজারে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে!
প্যারামাউন্ট দাবি করছে, তাদের প্রস্তাব নেটফ্লিক্সের তুলনায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বেশি নগদ প্রদান করছে! তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই অধিগ্রহণ সফল হলে হলিউডে তৈরি হতে পারে একচ্ছত্র আধিপত্য! যার কারণে একচেটিয়াবিরোধী উদ্বেগ বাড়বে! মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ইতিমধ্যেই প্রস্তাবটিকে “পাঁচ-অ্যালার্ম অ্যান্টিট্রাস্ট সংকেত” বলে অভিহিত করেছেন।
একই সময়ে, নেটফ্লিক্সের সহ-প্রধান নির্বাহী টেড সারানডোস জানিয়েছেন, তারা প্যারামাউন্টের ‘হস্টাইল বিড’-এর সম্ভাবনা আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন এবং নিজেদের চুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তিনি সতর্ক করেন, প্যারামাউন্টের প্রতিশ্রুত “সিনার্জি” আসলে কর্মী ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত বহন করে, যা নেটফ্লিক্স এড়াতে চায়।
চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্রেকআপ ফি। যদি ওয়ার্নার ব্রাদার্স শেষ পর্যন্ত প্যারামাউন্টের প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে তাদের নেটফ্লিক্সকে ২.৮ বিলিয়ন ডলার চুক্তি ভঙ্গের জরিমানা দিতে হবে। বিপরীতে, আলোচনার ফল ব্যর্থ হলে নেটফ্লিক্সকে ৫.৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু কেন হঠাৎ এই ‘হস্টাইল বিড’? বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্যারামাউন্ট কিছুতেই চায় না স্ট্রিমিং দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করুক নেটফ্লিক্স। এমনিই নেটফ্লিক্সের কনটেন্টকে পাল্লা দেওয়া কঠিন। তার উপরে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের হাতে রয়েছে হ্যারি পটার, ব্যাটম্যান, গেম অফ থ্রোনস-এর মতো সোনার খনি! এই সম্পদ যদি নেটফ্লিক্সের হাতে চলে যায়, তবে স্ট্রিমিং জগতে বাকিদের ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এমন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে প্যারামাউন্ট তাই ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণে মরিয়া।
ওয়ার্নার ব্রাদার্স অধিগ্রহণ নিয়ে প্যারামাউন্ট ও নেটফ্লিক্সের দ্বিমুখী প্রতিযোগিতার প্রভাবে শেয়ারবাজারে ইতিমধ্যে ওঠানামা শুরু হয়েছে। ট্রেড অ্যানালিস্টদের মতে, অধিগ্রহণ লড়াই এখনো শেষ হয়নি এবং উভয় প্রতিষ্ঠানই শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রকদের প্রভাবিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
এখন শুধু দেখার বিষয়, শেষ র্পন্ত ডিসি কমিক্স এবং এইচবিও-এর মালিকানা কার হাতে যায়- নেটফ্লিক্স না প্যারামাউন্ট? উত্তেজনায় গোটা বিনোদন বিশ্ব। শিল্প বিশ্লেষকদের ভাষায়, “এই চুক্তি শুধু একটি কোম্পানি বিক্রির প্রশ্ন নয়, বরং আগামী দশকের বিনোদন বাজারের কাঠামো কোন পথে যাবে সেটি নির্ধারণ করবে।”
রয়টার্স
ইএ/এসএন