বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ (দুপুর ১টা) তথ্য জানিয়েছে এভারকেয়ার হাসপতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডা. শাহাবউদ্দিন তালুকদার স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো অনুমান নির্ভর সংবাদ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়, ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে রয়েছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আরথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যা যেগুলোর চিকিৎসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসছেন। এবার নিজ বাস ভবনে অবস্থানকালে তার শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়।
কিন্তু ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি-পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির অবস্থার দ্রুত অবনতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কেবিন থেকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) তে স্থানান্তরিত করা হয়।
বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা বলা হয়, গত কয়েকদিনের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যে বেশ কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং বিপ্যাপ মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তার ফুসফুস ও অন্যান্য অর্গানকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য তাকে ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত ২৭ নভেম্বর তার একিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস ধরা পরে যেগুলোর নিবিড় চিকিৎসা এখনও চলছে। শরীরে গুরুতর ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল) এর কারণে তাকে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। এখনও নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে।
পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও 'ডিআইসি' (ডিসস্যামিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার ক্যগুলেশন) এর ফলস্বরূপ তাকে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান ট্রানফিউশন দিতে হচ্ছে। সব চিকিৎসার পরও জ্বর না কমার কারণে এবং পাশাপাশি রেগুলার ইকো কার্ডিওগ্রাফিতে অ্যারোটিক ভালভ্ এ কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়ায় ট্রান্স ওসফ্যাগাল ইকো করা হয় এবং সেখানে ইনফেকশন ধরা পড়ে। তৎক্ষণাৎ মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে এ রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশি-বিদেশি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ফলে আমরা আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি কোনো অনুমান বা ভুল তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখুন।
রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাই সহযোগিতা করুন। আমাদের মেডিকেল টিম সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সতর্কতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্মানিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে দোষা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আইকে/টিকে