হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

কনড্রোমালাসিয়া ও অস্টিওআর্থারাইটিস এই দু’টি কারণে সাধারণত নিয়মিত হাঁটুতে ব্যথা হয়ে থাকে। হাঁটুতে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু বাঁকালে বা সোজা করলে এক ধরণের শব্দ হয়, এই পপিং শব্দটিও ক্ষতিকারক হতে পারে।

হাঁটুর কাজ মূলত পায়ের নড়াচড়া এবং স্বাভাবিক হাঁটাচলা সম্পাদন করতে সহায়তা করা। তাই নিয়মিত হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হলে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করা কঠিন হতে পারে।

কারটিলেজ বা জয়েন্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকা তরল পদার্থ আমাদের মসৃণ চলাচলে সহায়তা করে। হাঁটুর জটিল গঠনের কারণে এবং নিয়মিত দেহের ভার বহনের কাজ সম্পাদনের ফলে এটি সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। হাঁটু আঘাতপ্রাপ্ত হলে এর লিগামেন্ট, কারটিলেজ ও মেনিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কনড্রোমালাকিয়া ও অস্টিওআর্থারাইটিস ভারতীয় উপমহাদেশে প্রধান দু’টি হাঁটুর জটিলতা, যা থেকে নিয়মিত ব্যথা হতে পারে। দু’টি রোগের লক্ষণসমূহ প্রায় একই রকম হলেও আক্রান্ত হবার বয়স ও কারণগুলি পৃথক।

চলুন জেনে নিই, কনড্রোমালাসিয়া ও অস্টিওআর্থারাইটিস সম্পর্কে
‘কনড্রোমালাসিয়া প্যাটেলাই’ বা ‘রানার্স নি’ কারটিলেজের একটি ব্যাধি, এটি বিভিন্ন জয়েন্ট এবং বেশিরভাগ সময় হাঁটুকে প্রভাবিত করে। যদি কেউ দীর্ঘ সময় ধরে তার পা ব্যবহার করে বা সর্বদা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে, তবে এটি কারটিলেজ অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।

এদিকে, অস্টিওআর্থারাইটিস একটি ডিজেনারেটিভ যৌথ রোগ, যা বৃদ্ধ বয়সীদের হাঁটুর ব্যথার কারণ। যখন জয়েন্টসমূহ এবং তার চারপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এটি দেখা দেয়। অস্টিওআর্থারাইটিস পুরোপুরি নিরাময় যোগ্য নয়, তবে ‘রানার্স নি’ ছয় মাস বা এক বছরের ব্যবধানে পুরোপুরি নিরাময় করা যেতে পারে। অস্টিওআর্থারাইটিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি আজীবন সমস্যা, যা যথাযথ যত্ন সহকারে হ্রাস করা যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায় না।

ফোর্টিস হসপিটালসের অর্থোপেডিক ডা. জয়ত্তার্থ কুলকার্নির মতে- ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কনড্রোমালাসিয়ার সাধারণ লক্ষণ হলো ব্যথা, যা হাঁটুর ক্যাপ এবং এর চারপাশের অঞ্চলে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত অত্যধিক সিঁড়ি বেয়ে চলাফেরা করলে, হাঁটু ভেঙ্গে অনেকক্ষণ বসে থাকলে, অতিরিক্ত উঠবস করলে বা হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপের কারণে হতে পারে। হাঁটু বাঁকানো বা প্রসারিত করার সময়ও রোগী ক্র্যাকিংয়ের মতো সংবেদন এবং শব্দ অনুভব করতে পারেন।’

কনড্রোমালাসিয়ার সম্ভাব্য কারণগুলি হলো

  • হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ।
  • পূর্ববর্তী জখম।
  • হাঁটুর ক্যাপ নড়ে বা সড়ে যাওয়া।
  • শরীরচর্চার সময় ভুল পদক্ষেপ।

কনড্রোমালাকিয়ার প্রতিকার

  • রানার হাঁটুর সাথে সর্বদা ‘রাইস’ নামক প্রটোকল দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। রাইস হলো রেস্ট-আইস প্যাকস- ক্রেপ ব্যান্ডেজ এবং এলিভেশন। একইসঙ্গে সঠিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
  • হাঁটুতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন শারীরিক অনুশীলন এড়াতে পরামর্শ দেয়া হয়।
  • আল্ট্রাসোনিক মাসাজ এবং হট প্যাকের মতো ফিজিওথেরাপি ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

যদি উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি থেকে মোটেও কোনো স্বস্তি পাওয়া না যায়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে রোগী আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি নামে একটি সার্জারি করতে পারেন, যা শিথিল ও প্রজ্বলিত কার্টেজকে সরিয়ে দেয়।

অস্টিওআর্থারাইটিসের সম্ভাব্য কারণগুলি হলো

  • বয়স বেড়ে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি।
  • বংশগত কারণ।
  • লিঙ্গ, যেমনটি নারীদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায়।
  • পুনরায় চাপ বা জখম

অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসা

  • ওজন কমানো।
  • নিয়মিত অনুশীলন।
  • প্রদাহনাশক ওষুধ।
  • সমর্থন বন্ধনী এবং হাঁটু ক্যাপ ব্যবহার।
  • শারীরিক ও পেশাগত থেরাপি।
  • সার্জারি। তথ্যসূত্র: হেলথলাইনডটকম এবং দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ