পেনিসিলিন এক প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অসামান্য আবিষ্কার। পেনিসিলিন পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম এ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশি জাতীয় রোগ জীবাণু ধ্বংস করাই এর কাজ। এই পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)।
‘১৯২৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে যখন আমার ঘুম ভাঙল, তখন পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের কথা আমার চিন্তাতেও ছিল না। কিন্তু সেটিই করে বসলাম।’ এভাবেই এক চিঠিতে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পেছনের গল্পটা লিখে গেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। আজ থেকে ৯২ বছর আগের নিতান্তই দুর্ঘটনাবশত ফ্লেমিংয়ের ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন।
সে সময় ফ্লেমিং লন্ডনের এক ল্যাবরেটরিতে স্টেফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। মাঝে গবেষণা কাজ স্থগিত রেখে জীবাণুবিদ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে যান নিজের জন্মভূমি স্কটল্যান্ডে। যাবার সময় তিনি স্টেফাইলোকক্কাসটি একটি কাঁচের পাত্রে রেখে যান এবং একটি ভুল করেন- গবেষণাগারের জানালা খুলে রেখে যান! এই ভুলের বদৌলতেই ফ্লেমিং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিসটি আবিষ্কার করেন।
দু’সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে ফ্লেমিং নিজের কর্মস্থলে ফিরে দেখেন পুরো ল্যাবরেটরি ধুলোভর্তি অবস্থায় রয়েছে। কোনো এক ফাঁকে ঝড়ো বাতাসের দমকে খোলা জানালা দিয়ে ল্যাবরেটরির বাগান থেকে কিছু ঘাস পাতা উড়ে এসে পড়েছে।
একটু পরিষ্কার করে কাজ শুরু করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করলেন, তার পেট্রি ডিশে (ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত একধরনের ছোট গোল স্বচ্ছ পাত্র) রাখা স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াগুলোতে পেনিসিলিয়াম নোটাটাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে।
কৌতূহলী বিজ্ঞানী ফ্লেমিং সংক্রমিত সেই পেট্রি ডিশকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখতেই খেয়াল করলেন, পেনিসিলিয়াম নোটাটাম ছত্রাকটি স্ট্যাফাইলোকক্কির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করছে।
ফ্লেমিং বুঝলেন, এই আগাছাগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে যার জন্য পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে বেশ কিছু পেনিসিলিয়াম ছত্রাক জোগাড় করে পরীক্ষা শুরু করেন। এসময় তিনি আরও দেখেন, পেনিসিলিয়ামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো শুধু ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই বাধা দেয় না, সংক্রামক অনেক রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বুঝতে পারলেন, তার এতদিনের গবেষণা অবশেষে সার্থক হয়েছে। ছত্রাকগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাম, তাই তিনি এর নাম দিলেন পেনিসিলিন।
পেনিসিলিয়াম ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পেছনে অবশ্য বিজ্ঞানী ফ্লেমিংয়ের চেয়ে জার্মান বংশোদ্ভূত ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ আর্নেস্ট চেইনের (১৯০৬-৭৯) কৃতিত্ব কোনো অংশে কম নয়। এই বিজ্ঞানী ১৯৩৮ সাল থেকে চেষ্টা চালাতে থাকেন কীভাবে মানুষের শরীরের উপযোগী একটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যায়।
চেষ্টার ফল মেলে ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা অ্যান মিলারের ওপর সফলভাবে পেনিসিলিন প্রয়োগ করা হয়। বেঁচে যান অ্যান মিলার।
তাই বলা যায়, আর্নেস্ট চেইনের মতোই হাওয়ার্ড ফ্লোরিও পেনিসিলিনের অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। আর অবদান রেখেছেন বলেই তো ১৯৫৫ সালে এই দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
টাইমস/জিএস