বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত করিম জুটমিলের এক হাজার ৭৫৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা টাকার চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের সূচনা করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এসময় মন্ত্রী ৩০ জনের হাতে চেক ও সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, আমরা পিপিপিতে যাব নাকি জিটুজিতে যাব এ নিয়ে অনেকগুলো মিটিং করেছি। বেশিরভাগ আছেন, যারা মিল চালান, তারা লিজ পদ্ধতিতে মিল পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। আমরাও সেভাবে চিন্তাভাবনা করছি।
তিনি বলেন, এখন আমরা লিজ পদ্ধতিতে যেতে চেষ্টা করছি। কারণ এখন আধুনিক যুগে তৎকালীন ষাট সালের মেশিন দিয়ে চলে না। এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান করতে হলে নতুন মেশিন আনতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে। কম বিদ্যুতে বেশি প্রোডাকশন করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে মিলগুলো চালু করব।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করিম জুট মিলসের অবসায়িত ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকদের পাওনা বাবদ মোট ১৯২ কোটি টাকা; ৬১২ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা বাবদ ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; ২ হাজার ৬২৫ জন বদলি শ্রমিকদের পাওনা বাবদ ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকাসহ মোট ২৫১ কোটি ৫৮ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, অবসরে পাঠানো শ্রমিকদের মোট পাওনার ৫০ শতাংশ তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্র আকারে।
এতে আরও জানানো হয়, বন্ধ ঘোষিত ২৫টি পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পরে অবসরপ্রাপ্ত ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় এক হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিনটি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। পরে শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে পুরো পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা একসঙ্গে পরিশোধের জন্য যাবতীয় পাওনার হিসাব চূড়ান্ত করে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিজেএমসি। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে করিম জুট মিলসের শ্রমিকদের পাওনা বাবদ অর্থ ছাড় করায় মঙ্গলবার তাদের তা বুঝিয়ে দেওয়া হল।
এছাড়া বিজেএমসির অর্থায়নে বিভিন্ন মিল এলাকায় দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং নয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলছে। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিদ্যালয়গুলোকে সরকারি করা বা এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
গত ১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতি শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে পরিশোধ ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং শ্রমিকলীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ।
টাইমস/এইচইউ