যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে হামাস। যেটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাস হওয়া প্রস্তাবের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।

তিন ধাপের ওই প্রস্তাবের শুরুতে ইসরায়েল ও হামাস একটা সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের কথা বলা হয়। কিন্তু হামাসের পক্ষ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করলেও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই প্রস্তাবের প্রাথমিক ধাপ কার্যকরে আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক সম্মতি জানিয়েছে হামাস। হামাস বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ১৬ দিন পর জিম্মি বিনিময় করবে।

শনিবার হামাসের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।

এই প্রস্তাব অনুযায়ী হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি সৈন্য ও বেসামরিক পুরুষদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

মূলত, হামাস দাবি করছে– প্রাথমিক পর্যায়ের এই চুক্তি কার্যকরের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সব জিম্মি বিনিময় এবং তৃতীয় পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা প্রাথমিক বন্দি বিনিময়ের পর ইসরায়েল পুনরায় হামলা করলে শান্তি আলোচনা পুরোপুরি ভেস্তে যাবে। এই আশঙ্কায় তারা এর আগে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিশ্চিত করতে বলেছিল। বিপরীতে ইসরায়েল চাচ্ছে প্রাথমিক বন্দি বিনিময়ের পর আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবে এমনটাই বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, প্রথম ধাপে জিম্মি-বন্দি বিনিময় ও গাজায় ত্রাণ সহযোগিতা উন্মুক্ত এবং সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে ইসরায়েল। দ্বিতীয় ধাপে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

ইসরায়েলের বর্বরতায় আস্থাহীনতার কারণে হামাস অনিশ্চিত এই প্রক্রিয়ায় এগোতে চাইছিল না। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় অবশেষে হামাস রাজি হয়েছে প্রাথমিক আলোচনার শুরু করতে। যেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের আলোচনাকারী দলের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছে, ‘এখন চুক্তি অর্জনের সত্যিকারের সুযোগ রয়েছে। এটি গাজায় ৯ মাসব্যাপী যুদ্ধের অতীতের দৃষ্টান্তের বিপরীতে, যখন ইসরায়েল বলেছিল যে, হামাস দ্বারা সংযুক্ত শর্তগুলো অগ্রহণযোগ্য।’

শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধান কাতারে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে একটি প্রাথমিক বৈঠক করে দেশে ফিরেছেন এবং আগামী সপ্তাহে পুনরায় আলোচনা হবে।

অর্থাৎ হামাসের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিতকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত সময় বলে অভিহিত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাচ্ছেন একটা যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে। এজন্য মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সাহায্যে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন, ইসরায়েল এবং কাতারের মধ্যকার সক্রিয় কূটনীতির মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরেই গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। দোহা থেকে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে নির্বাসিত হামাস নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। আট মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন নারী এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বরিশালে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 08, 2025
img
দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেব না : নুর Nov 08, 2025
img
১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচি দেওয়া পাগলের প্রলাপ: সালাহউদ্দিন Nov 08, 2025
ইসলামের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Nov 08, 2025
img
ধানের শীষের বিজয় মানেই উন্নয়ন : চৌধুরী নায়াব ইউসুফ Nov 08, 2025
আনুশকা শর্মা মুখ্য ভূমিকায়, বড় পর্দায় ফেরার প্রস্তুতি Nov 08, 2025
অশালীন নাচে মালাইকা, সমালোচনার ঝড়ে হানি সিংও Nov 08, 2025
প্রিয়াঙ্কা-সোনমের শুভেচ্ছায় ভাসলেন ক্যাটরিনা Nov 08, 2025
অভিষেক শর্মার আগ্রাসী ব্যাটিং, টিম ডেভিডকে ছাড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড Nov 08, 2025
ইউরোপে হারের পর লা লিগায় ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত রিয়াল Nov 08, 2025
আইসিসি নিয়ম বদলে দিচ্ছে অলিম্পিকের ক্রিকেটের চেহারা Nov 08, 2025
এই গণভোটের মধ্য দিয়ে কি আইন প্রণীত হয়ে যাবে? : সালাহউদ্দিন আহমেদ Nov 08, 2025
সংস্কারের বিষয়গুলোকে জনগণকে জানাতে গণভোটের প্রয়োজন Nov 08, 2025
আমজনতার দলকে নিবন্ধন দিতে ইসিকে হিরো আলমের আল্টিমেটাম Nov 08, 2025
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে 'ভাঙচুর ও লুটপাটের' অভিযোগ! Nov 08, 2025
img
টাঙ্গাইলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাতিলের মিছিল Nov 08, 2025
img

সৌদি প্রো লিগ

রোনালদো ও ফেলিক্সের দুর্দান্ত গোল, আটে আট আল-নাসরের Nov 08, 2025
img
ভেনেজুয়েলাকে সামরিক সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া Nov 08, 2025
img
একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি থেকে চুপিসারে সৈন্য প্রত্যাহার করলো ভারত Nov 08, 2025
img
বিএনপিই পারবে সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে : দুলু Nov 08, 2025