গাজার দুই শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ১০০

মৃত্যুর মিছিল থামছেই না গাজায়। লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি টানলেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে যেন আগ্রাসনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সবশেষ বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলীয় দুই শহর বেইত লাহিয়া এবং জাবালিয়ায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার রাষ্ট্রটি। এই সময়ে এ দুই শহরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০০ জন।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসালের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নিহতদের মধ্যে ৭৫ জন বেইত লাহিয়া শহরের এবং বাকি ২৫ জন জাবালিয়া ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ আগস্ট ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার নাম করে ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে শত চাপ সৃষ্টির পরও সে আগ্রাসন এখনও থামে নি। মাঝে কিছুদিন আভিযান ও হামলার মাত্রা কিছুটা স্তিমিত হলেও সবশেষ গত ৫ অক্টোবর থেকে উত্তর গাজায় অভিযানে বিশেষভাবে জোর দেয় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারপর থেকে এ পর্যন্ত উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের স্থলবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১০ হাজার।

গাজার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বসবাস করে উত্তরাঞ্চলে। ৫ অক্টোবর বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে অঞ্চলটিতে খাবার, ওষুধ, জ্বালানি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে ইতোমধ্যেই মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে উত্তর গাজায়।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা পানি ও খাবারের সন্ধানে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে উত্তর গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ইতোমধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থতি দেখা দিয়েছে। গণহত্যা, খাদ্যাভাব এবং লাগাতার হামলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করছেন উত্তর গাজার বাসিন্দারা।

এ হামলার ব্যাপারে এক বিবৃতি দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, উত্তর গাজায় হামাস সংগঠিত হচ্ছে— এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সবশেষ বিমান হামলাটি চালিয়েছে তারা।

এদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৪ হাজার ৪০০ জন সাধারণ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও এক লক্ষাধিক।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত গাজায় তার বাহিনীর অভিযান চলবে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘রাষ্ট্র মেরামত ছাড়াই অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিলে এই প্রজন্ম আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে’ Nov 30, 2024
img
হাসপাতালে আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলা Nov 30, 2024
img
নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে অব্যবহৃত জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার:ফাওজুল কবীর Nov 30, 2024
img
রোববার ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় Nov 30, 2024
img
ভবিষ্যতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না:অর্থ উপদেষ্টা Nov 30, 2024
img
‘ভারতের সব অমিমাংসিত ইস্যুর সমাধান হলেও বাংলাদেশেরগুলোকে প্রাধান‍্য দেয়া হয়নি’ Nov 30, 2024
img
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা:হাইকোর্টের রায় রোববার Nov 30, 2024
img
২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে অনিশ্চয়তা:সিদ্ধান্তহীনতায় আইসিসি Nov 30, 2024
img
সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদনের শেষ দিন আজ Nov 30, 2024
img
আইনের শাসন নিশ্চিতে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে:প্রধান বিচারপতি Nov 30, 2024