আগামী বাজেটে থাকবে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ : অর্থ উপদেষ্টা

আগামী বাজেটে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা ভবন নির্মাণ এবং নদীশাসনের মতো কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে আনার জন্য ‘ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট’ করা হবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করার পূর্বে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট প্রণয়নের নীতিগত বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক রিপোর্টাস ফোরামের (ইআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত রিপোর্টারদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময়সভায়, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা ইআরএফের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ২৮টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এ সময় ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, রেফায়েত উল্লাহ মৃধা বর্তমান কমিটির এজিএম মানিক মন্তাসির, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগেই ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা জরুরি।

কারণ, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের একটি ধাক্কা অর্থনীতিতে পড়বে। এই সময় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়াও আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ চেইনে বিদ্যমান সিন্ডিকেট ভাঙ্গা ও সব ধরনের চাঁদাবাজী বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আগামী বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা অন্তত ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করে ব্যয় করার ক্ষেত্রে সরকারের আরো সতর্ক হওয়া। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের প্রত্যেকটিতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মানের একটি করে হাসপাতাল স্থাপন করার জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ এবং ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ককর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কারা পুলিশ, জেলার, বিচারকসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও বেতন-ভাতার বাইরেও তারা ঝুঁকিভাতা পাচ্ছেন, যা সরকারের অন্যান্য সংস্থায় কর্মরতদের সঙ্গে আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এই ধরণের ঝূঁকিভাতা প্রত্যাহার করা, কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া, অন্তবর্তীকালীন সরকার কোন খাতের সংস্কার অর্থনীতি ও জনজীবনে কতটা প্রভাব পড়বে- সে সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়া আগামী বাজেটে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য এবং যথাসম্ভব সাশ্রয়ী করা, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে পিপিপির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেসরকারিখাতে মিডলেবেল ম্যানেজমেন্টের উপযোগী জনবলকে দক্ষ করে তুলার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়াও ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, কর পরিশোধিত আয় থেকে একজন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০-১৫ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। আবার ব্যাংকের জমা স্থিতির ভিত্তিতে আবগারি শুল্ক কাটা হয়। এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় সক্ষমতা কমেছে। আবার বিভিন্ন ভীতির কারণে অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না। এ রকম অবস্থায় ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার এবং মুনাফার ওপর কর কমানো যেতে পারে।

এফপি/টিএ

Share this news on: