রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা,কূটনীতিক এবং অভিজাত সমাজের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঈদগাহে না গেলেও বঙ্গভবনে ঈদের নামাজ পড়েন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার সহধর্মিনী ড. রেবেকা সুলতানা বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিমিয় করেন। উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সেখানে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সাংবাদিক।
এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বিচারক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গভবনের এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০০ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যগতভাবে সুস্বাদু খাবার দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করা হয়।
প্রতি বছর জাতীয় ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি। কোভিড মহামারির সময় শুধু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন। কারণ তখন দুই বছর জাতীয় ঈদগায় জামাত হয়নি।
২০২৩ সালে ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগায় ফিরলে আবদুল হামিদ তাতে অংশ নেন। মো. শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পরের ঈদগুলোতে জাতীয় ঈদগায়ই ঈদের নামাজ পড়ে আসছিলেন। তবে এবার সেই পরম্পরার ব্যতিক্রম হয়েছ।
এরআগে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ দেখাদেখি হয়নি। সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান এক সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের রেওয়াজ ছিল। তবে এবার তার ব্যতিক্রম হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাত ১২টায় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চলে যাওয়ার পর সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
একই ঘটনা ঘটেছিল ২৬ মার্চ ভোরে সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়েও। রাষ্ট্রপতি স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চলে যাওয়া পর সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা। অথচ এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতেন জাতীয় সূর্য সন্তানদের।
জাতীয় দুটি অনুষ্ঠানে ব্যপ্তি ৫ থেকে ১০ মিনিট। আলাদা ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে ‘টেকনিক্যালি’ কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে এমন আয়োজন হলে সমালোচনা অনেক হতো। তাই রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঈদগাহে জামাতে অংশ নেওয়া থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ঈদের নামাজ জাতীয় ঈদগাহে পড়বেন না, তা আগেই জানিয়েছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা। কী কারণে তিনি জাতীয় ঈদগায় যাচ্ছেন না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি ধর্ম উপদেষ্টা।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা।
সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজকে একটা ঐক্য গড়ে তোলার দিন। আমরা স্থায়ীভাবে এই ঐক্য গড়ে তুলতে চাই, ঈদের জামাতে এটাই আমাদের কামনা।”
যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঈদগাহে নামাজে অংশ নিয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গেলে দু’জনের দেখা হতো। রাষ্ট্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মেধ্যে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হতো।
প্রধান উপদেষ্টা যে রাষ্ট্রপতিকে এড়িয়ে চলছে এবারের ঈদেও সেটি প্রমাণ হয়েছে।
সাবেক বিচারক, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
তার এক বছর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে সাহাবুদ্দিনও পড়েন চাপে।
শেখ হাসিনাকে উৎখাতের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি ওঠে। কয়েকটি সংগঠন সেই দাবিতে কয়েকদিন বঙ্গভবনের সামনে কর্মসূচিও পালন করেছিল।
তবে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এই যাত্রায় বঙ্গভবনে টিকে যান মো. সাহাবুদ্দিন।
টিকে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তার গুরুত্ব যে কম, তা স্পষ্ট। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশ সফর থেকে ফিরলেও রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না।
এই সময়ে রাষ্ট্রপতি হিসাবে সাহাবুদ্দির কর্মসূচিও অনেক সীমিত হয়ে পড়েছে।
এসএন