চার খাতে সংস্কারে ৩৫ লাখ চাকরি সৃষ্টির সুযোগ

বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক (সিপিএসডি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চারটি খাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত সংস্কার কার্যকর করলে বছরে ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। এ চারটি খাত হচ্ছে আবাসন, শিল্পে ব্যবহৃত রঞ্চ শিল্প, তৈরি পোশাক এবং ডিজিটাল আর্থিক সেবা।

সিপিএসডি’র এই প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে এ খাতে প্রতিবছর ২৩ লাখ ৭ হাজার কর্মসংস্থান বাড়বে। আবার শিল্পের রঙের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে; শুল্কের হারও অনেক বেশি। এটি ঠিক করা গেলে এ খাতে সাড়ে ছয় লাখ কর্মসংস্থান বাড়বে।

এ ছাড়া ডিজিটাল আর্থিক সেবায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মার্চেন্টদের লেনদেন সীমা বাড়ানোর মতো কিছু জটিলতার সমাধান করা হলে এ খাতেও ৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্ষেত্রে পাঁচটি বাধার কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত ও করহার।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পৃথক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। আলোচনা দুটি সঞ্চালনা করেন আইএফসির বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে আইএফসির সুপারিশগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন করা হয় লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই এসব সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান বাড়ানো। প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে তা সরকারের কাজে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর, অনন্ত গ্রুপের এমডি শরিফ জহির, এবিসি রিয়েল এস্টেটের এমডি শ্রাবন্তী দত্ত ও নিপ্পন পেইন্টের হেড অব অপারেশনস অরুণ মিত্রা।

দেশে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন শরিফ জহির। তিনি বলেন, অবকাঠামো অন্যতম বড় সমস্যা। এটি সমাধান করা গেলে বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিমাণ দুই-তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরিবহন ও সরবরাহ খাত, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন পরিষেবা এবং শুল্ক-কর নিয়েও নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। শরিফ জহির বলেন, সবগুলো সমস্যাই সমাধানযোগ্য। তবে এ জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনকশা থাকা আবশ্যক।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে সমর্থন জানাল যুক্তরাষ্ট্র Apr 17, 2025
img
ব্রিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন, অথচ নীরব ফেডারেশন Apr 17, 2025
img
অনিল কাপুরকে বিয়ে, যা বললেন মাধুরী Apr 17, 2025
img
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবের সফর নিয়ে যা বলল ভারত Apr 17, 2025
img
‘জাহিরের সঙ্গে আপনার ডিভোর্স ঘনিয়ে আসছে’, কটাক্ষের মুখে সোনাক্ষীর পাল্টা জবাব Apr 17, 2025
img
৩২ কোটি টাকার অনিয়মে ঢাকা বোট ক্লাব থেকে বেনজীর আহমেদ বহিষ্কার Apr 17, 2025
img
শিক্ষার্থী-বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রদলের হামলা, আহত ১০ Apr 17, 2025
img
কেকেআর-পাঞ্জাব ম্যাচের দিনই কলকাতায় তারকাখচিত ইভেন্ট আরিয়ানের Apr 17, 2025
img
তালেবানের ‘সন্ত্রাসী’ তকমা বাতিল করল রাশিয়া Apr 17, 2025
img
রণবীর কাপুর না রাণবীর সিং? পুরনো প্রশ্নে দীপিকার জবাব আবার আলোচনায় Apr 17, 2025