চবিতে পরীক্ষার হলে বসেই বন্ধুকে প্রশ্ন পাঠালেন শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অসাধুপায় অবলম্বনের সময় এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

আটক পরীক্ষার্থীর নাম মুনতাসির কাদের তাওসিফ।

গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৩০৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম শিফটের পরীক্ষায় ধরা পড়েন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষার প্রথম শিফটে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৩০৪ নম্বর কক্ষ থেকে আটক করা হয় অসাধুপায় অবলম্বনকারী ওই পরীক্ষার্থীকে। অভিযুক্ত পরীক্ষার্থী নাম মুনতাসির কাদের তাওসিফ। তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, পরীক্ষার হলে সাধারণত মোবাইলসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও পরীক্ষার হলে দেরিতে প্রবেশের সুবাদে মোবাইল নিয়ে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলেন তাওসিফ। পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা পর ফেসবুকে শাফায়েত আহমেদ (সিহান) নামে এক বন্ধুর কাছে প্রশ্নের ছবি তুলে পাঠান মুনতাসির কাদের তাওসিফ। তবে তার বন্ধু ম্যাসেজগুলো দেখার আগেই হল পরিদর্শকের হাতে ধরা পড়েন ওই পরীক্ষার্থী। তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষার্থীকে ডিন অফিসে নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। তবে কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির পরীক্ষা সমন্বয়ক টিমের সঙ্গে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চবির পরিদর্শকদের ধন্যবাদ, তারা দ্রুত বিষয়টি শনাক্ত করায় বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। অন্যথায় প্রশ্নের ছবি কোনো চক্রের হাতেও চলে যেতে পারতো। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে ছেলেটি ওরকম কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত না। সে তার বন্ধুর কাছে পাঠিয়েছে প্রশ্নটি।’

এ বিষয়ে রাবির ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মূলত দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করেছি সে কোনো লেনদেন করে এসব করেছে কি না! কিন্তু তার পারিবারিক অবস্থা এবং যাকে প্রশ্ন পাঠিয়েছে তার রেসপন্স দেখে মনে হয়েছে ওরকম কিছু না। এছাড়া দ্বিতীয় শিফটের প্রশ্ন যেহেতু ভিন্ন। তাই কোনো সমস্যার সম্ভাবনা নেই। তার বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডি দেখছে।’

অভিযুক্ত মুনতাসির কাদের তাওসিফ বলেন, আমি কোথাও কোচিং করিনি। ভালোভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেইনি। আবেদন করেছিলাম, তাই পরীক্ষা দিতে এসেছি। শাফায়েত আমার ছোটোবেলার বন্ধু। তিনি বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিচ্ছে, তাই তাকে প্রশ্নটা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ম্যাসেজ দেখেনি। এমনকি স্যারদের সামনে যখন তাকে কল দিলাম, তখন লাউডস্পিকারে ছিল ফোন, সবার সামনেই তিনি বলেছে, ‘তুই প্রশ্ন পাঠালে আগে বলবি না? আমি তো ঘুমে ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যে চক্রের কথা বলছেন, আমি জানিই না এটা কি? আমি দেশের বাইরে চলে যাব। ইন্টারে বিজ্ঞান থেকে পড়াশোনা করেছি। তবে ঠিক মতো না পড়ায় মানবিক ইউনিটে পরীক্ষা দিচ্ছি এখন।’

এ বিষয়ে চবির সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা পরে মুনতাসির কাদের তাওসিফ নামে এক শিক্ষার্থীকে অসাধুপায় অবলম্বনের সময় হাতেনাতে ধরেন পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তারিকুল হাসান চৌধুরী। পরে তাকে পুলিশের উপস্থিতিতে দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মনে হয় না সে কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাই তার পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দপ্তরে আটক রাখা হয়েছে। এরপর ছেড়ে দেওয়া হবে।’

আরএ

Share this news on: