দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসন শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ আবারও মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত দলটি, শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ফের একনায়ক শাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলের ঘটনা বেড়েছে। তাদের মধ্যে কিছু সদস্য গোপনে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা শুরুর দিকে কম থাকলেও এখন তা বাড়ছে।
এই সক্রিয়তা ও মিছিলের কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানান প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে পুলিশ, সিভিল প্রশাসন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রশাসনের মধ্যে যদি কোনো ধরনের সমর্থন না থাকত, তবে এত বড় গণহত্যার পর আওয়ামী লীগের পুনরায় মাঠে নামার সম্ভাবনা ছিল না।
এদিকে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগকে তৃতীয় বিকল্প শক্তি ঠেকানোর জন্য সমর্থন প্রদান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অশান্ত হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড শিষ্টাচারবহির্ভূত হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি সরকারের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ভারতের সহায়তায় আওয়ামী লীগ পুনরায় রাজপথে সক্রিয় হতে সক্ষম হয়েছে এবং দেশি-বিদেশি শক্তি তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করছে। তারা এই মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এদিকে, গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের অন্তত চারটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার উত্তরায় মিছিল হয়েছে। তবে, সরকারও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, পুলিশকে আওয়ামী লীগের মিছিল ঠেকানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, তবে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করা উচিত।’ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘ফ্যাসিজম যেন বাংলাদেশে আর না দাঁড়াতে পারে, এজন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা জরুরি।’
এসএস/এসএন