নিখোঁজ নারী মনে করে অন্য নারীর লাশ দাফন

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা হেজাতিপাড়া গ্রামের ভুট্টাখেত থেকে গত সোমবার বিকালে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। দাহ্য পদার্থ দিয়ে ওই লাশের মুখ পোড়ানো ছিল। লাশে পচন ধরেছিল। পুলিশ ধারণা করছিল, কয়েক দিন আগে তাকে অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ ভুট্টাখেতে ফেলে রাখা হয়।

 এদিকে গত ৩০ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের গোলাপী বেগম। এই লাশ উদ্ধারের পর গোলাপী বেগমের পরিবারের লোকজন মনে করেন, এই লাশ নিখোঁজ গোলাপীর। তারা গোলাপীর লাশ মনে করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন।

অথচ বুধবার সকালে ‘আসল’ গোলাপী বেগম এসে হাজির হয়েছেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

আসল গোলাপী বেগমের স্বামী মনির হোসেন একজন বাক প্রতিবন্ধী দিনমজুর। গোলাপী বাড়িতে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ করেন। তাদের ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান আছে।

গোলাপী বেগমের ভাসুর মাজদার রহমান বাদী হয়ে ১ জুন বাঘা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাশ দাফনের পর গোলাপীর মামা শাকিব হোসেন বাদী হয়ে বাঘা থানায় হত্যা মামলা করেন।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে মনির হোসেনের স্ত্রী গোলাপী বেগম আড়ানী রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে নামেন। স্থানীয় লোকজন তাকে চিনতে পেরে উপজেলার আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিয়ে যান। গোলাপীকে জীবিত পাওয়া গেছে—এই খবর পেয়ে তার মামা শাকিব হোসেন, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ভাশুর মাজদার রহমান, জা সাজেদা বেগম চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হন। তারা গোলাপী বেগমকে শনাক্ত করেন। চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম গোলাপী বেগমসহ তাদের সবাইকে বাঘা থানায় পাঠিয়ে দেন।

গোলাপী বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২৯ মে তিনি উপজেলার রুস্তমপুর পশুহাটে ৪২ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করেন। এ টাকা নেয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ির লোকজন চাপ দিতে থাকে। তিনি নিরুপায় হয়ে পরের দিন বিদ্যুৎ বিল দেয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজশাহী শহরে এক আত্মীয় বাড়িতে চলে যান।

তিনি আরো জানান, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। এ ছাড়া তার ৬ বছরের সন্তান মারুফ হোসেনের কথা ভেবে বুধবার সকালে রাজশাহী থেকে ট্রেনে আড়ানী রেলস্টেশনে পৌঁছান।

‘আমার ছেলে বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় গোলাপী নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের বিভিন্ন কথা শুনিয়ে দেয়’- বলেন গোলাপী বেগমের শ্বশুর বিচ্ছাদ আলী।

বুধবার দুপুরে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন আলী জানান, চেহারা বিকৃত হওয়ার কারণে লাশ শনাক্ত করতে ভুল হয়েছিল। গোলাপী বেগম ফিরে আসার পর তারা বুঝতে পেরেছেন মৃত নারী মনির হোসেনের স্ত্রী গোলাপী নন।

চারঘাট উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের সুরুজ আলী নামের এক ব্যক্তি এসে বুধবার সকালে দাবি করছেন, গোলাপী বেগম হিসেবে যার লাশ দাফন করা হয়েছে, সেটি তার স্ত্রী দোলনা বেগমের লাশ। ৯ জুন বিকালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তিনি। মরদেহের সঙ্গে থাকা স্যান্ডেল ও জামা-কাপড় দেখে দাফন করা লাশটি তার স্ত্রীর বলে নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে কোক স্টুডিও বাংলা, ফের সমালোচনা May 07, 2024
img
দেশে যানবাহনের নতুন স্পিড লিমিট, মোটরসাইকেলের গতি নামানো হলো ৬০-এ May 07, 2024
img
সূর্যকুমারের সেঞ্চুরিতে জয়ে ফিরল মুম্বাই May 07, 2024
img
রাফায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত ১২, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত May 07, 2024
img
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ৩য় দফার ভোটগ্রহণ শুরু May 07, 2024
img
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন May 07, 2024
img
নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত May 07, 2024
img
দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস May 07, 2024
img
যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হামাস, গাজাবাসীর উচ্ছ্বাস May 07, 2024
img
উপজেলা নির্বাচন: সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা May 06, 2024