চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কুয়াইশ এলাকায় সংঘটিত জোড়া খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলাটিতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ।
রোববার (২৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ বেগম নাজমুন নাহার পুলিশের আবেদনের শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, হাটহাজারী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকার পাশে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নাহার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে হাঁটার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুষ্কৃতকারীরা গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনিস। কায়সার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে ধাওয়া করে ধরে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কায়সারকেও মৃত ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার স্থান হাটহাজারী উপজেলার কুয়াইশ এলাকায় হওয়ায় নিহত কায়সারের ভাই মো. আরিফ বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছোট সাজ্জাদসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, ২৮ আগস্টের ডাবল মার্ডারের একটি অংশ হাটহাজারীতে পড়ায়, সেখানে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ছোট সাজ্জাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল, আদালত তিন দিন মঞ্জুর করেন।
ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আলোচিত এক সন্ত্রাসী। খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকায় পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পুলিশের ভেতরেও তোলপাড় তোলে। ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে ‘নগ্ন করে পেটানোর’ হুমকি দেন। এরপর তাকে গ্রেফতারে পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করে। অবশেষে ১৫ মার্চ তাকে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
কারাগারে থাকাকালীনই চট্টগ্রাম নগরীতে আরেকটি চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলায় ছোট সাজ্জাদকে আসামি করা হয়। গত ৩০ মার্চ রাতভর নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকায় একাধিক মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীরা একটি প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গাড়িটি চন্দনপুরায় পৌঁছানোর পরও গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে তারা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লাহ। আহত হন আরও দুজন।
এ ঘটনায় মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় ছোট সাজ্জাদ, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ ছোট সাজ্জাদকে তিন দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাটহাজারীর শিকারপুর এলাকার মো. জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক শিবির ক্যাডার ও আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আরএ