সরকার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা মেরামতে ব্যস্ত : টাফ

সরকার বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যেসব বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, শুধুমাত্র সেসব মেরামত করতে ব্যস্ত আছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ)।

বৃহস্পতিবার (১ মে) মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।

সংগঠনটির সভাপতি ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা মো. রফিক আহমে, আসাদুল্লাহ, মোসলেম উদ্দিনসহ অনেকে।

এ সময় নেতাকর্মীরা বলেন, সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংগ্রাম আর ঐক্যের আন্তর্জাতিক দিন, মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা আমোদ-প্রমোদের ন্যায়সংগত দাবিতে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে, জীবন দিয়ে সেইসব মহান শ্রমিক নেতারা পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্রের শোষণ বৈষম্য প্রকাশ করে দিয়েছিলেন।

নেতাকর্মীরা বলেন, এ বছর আমরা যখন মে দিবস পালন করছি, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইজরায়েলকে মদদ দিয়ে চলেছে গাজায় গণহত্যা চালাতে। যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব আবাসভূমি প্যালেস্টাইন দখল করে রেখেছে প্রায় ৭২ বছর এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করে চলেছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত গজায় ইসরায়েলী সৈন্যরা প্রায় ৫০ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নারী, শিশু নাগরিকদের হত্যা করেছে। যার ভেতর ৬০ শতাংশ হচ্ছে নারী ও শিশু।

সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের শহরগুলোতে জাতি ধর্ম বর্ণ বয়স নির্বিশেষে মানুষ গাজায় ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে। দুনিয়াকে তারা জানান দিয়েছেন, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়াতে কাউকে মুসলমান হতে হয় না। শত নির্যাতনের মুখে ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে তেলআবিবের রাস্তায় দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের শ্রমিক শ্রেণির পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি।

তারা আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকেরা গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশেও ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে লাখ লাখ ছাত্র শ্রমিক মুসুল্লি জনতা! সারা দুনিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক জনগণের প্রতি আমরা জানাই সশ্রদ্ধ লাল সালাম। ফিলিস্তিনের সংগ্রামী জনগণও লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদেরকে শেখাচ্ছেন জাতি ধর্ম বর্ণ নয়, মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ-মানবিক মানুষ।

তারা বলেন, দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের মদদপুষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠন সংগ্রাম আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছিলেন। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক হয়েছিলেন, মামলায় ঘরছাড়া হয়েছিলেন লাখ লাখ বিরোধী দল ও মতের মানুষ।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনার পুলিশের গুলিতে প্রায় দুই হাজারের মতো ছাত্র, শ্রমিক জনতা জীবন দিয়েছে। ২০ হাজারের অধিক মানুষ পঙ্গু হয়েছে, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। এদের অধিকাংশই শ্রমজীবী মানুষ, যারা ফ্যাসিবাদের বর্বরোচিত গুলি প্রতিরোধে রাস্তার লড়াইয়ে দৃঢ় ব্যারিকেড গড়ে তুলেছিলেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছর দেশে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার অভিপ্রায়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্তবর্তীকালীন সরকার সংস্কারের নামে মূলত বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যেসব বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র সে সবই তারা মেরামত করতে ব্যস্ত আছেন।

আরএম/টিএ 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাকুন্দিয়ায় দাফন হলেন নরসিংদীতে দেওয়াল ধসে নিহত বাবা-ছেলে Nov 22, 2025
img
‘বিশ্বপ্রেমিক’ সিনেমার প্রযোজক কামাল পারভেজ আর নেই Nov 22, 2025
img
হালিশহরের বাড়িতে চাষে ব্যস্ত ইউভান-ইয়ালিনি Nov 22, 2025
img
ভূমিকম্পে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা Nov 22, 2025
img
৩ ম্যাচ সিরিজের একটিতেও জেতা হলো না ক্যারিবিয়ানদের Nov 22, 2025
img
আ.লীগকে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না : ইশরাক Nov 22, 2025
img
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ Nov 22, 2025
img
বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয় : প্রধান বিচারপতি Nov 22, 2025
img
যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত: বিমানবাহিনী প্রধান Nov 22, 2025
img
আমার রূহটা ইন্ডিয়ায়, আমি আমেরিকায়: মাহি Nov 22, 2025
img
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ : সালাউদ্দিন Nov 22, 2025
img
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন ছাত্রদল নেতা Nov 22, 2025
img
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাক্ষাৎ Nov 22, 2025
img
সোলজার সিনেমার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন পরিচালক Nov 22, 2025
img
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে: আমীর খসরু Nov 22, 2025
img
মাহফুজ আলম ও এনসিপি নেতাদের দুর্নীতির প্রমাণ ফাঁস করব: মুনতাসির Nov 22, 2025
img
আ.লীগ কখনও রাজনৈতিক দল নয়, ছিল মাফিয়া সংগঠন : সালাহউদ্দিন Nov 22, 2025
img
ছেলের সঙ্গে শুটিংয়ে রেগে যান অমিতাভ, কারণ জানালেন নির্মাতা Nov 22, 2025
img
নাগরিকরা পরিবর্তন না করলে পরিবর্তন সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Nov 22, 2025
img

রুকাইয়া জাহান চমক

‘মেয়েদের জীবনের থেকে একটা ওড়না বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ Nov 22, 2025