আবরার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে আসামিপক্ষ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে দণ্ডিত আসামিদের পক্ষে আগামী সপ্তাহে আপিল করবেন তাদের আইনজীবী। 

শনিবার (৩ মে) এমন তথ্য জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আসামি মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন।

এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও পাঁচজনের যাবজ্জীবনের দণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয় বলে শনিবার জানা গেছে।

আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেয়েছি। এখন নিয়ম অনুসারে সংশ্লিষ্ট আসামির আইনজীবীরা আপিল বিভাগে আপিল করবেন। আমি আমার আসামিদের আপিল প্রস্তুত করে ফেলেছি। আগামী সপ্তাহে ইনশাআল্লাহ ফাইল করব।

এর আগে, গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মামলায় রায় দেন।

রায়ের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আসামিপক্ষের আইনজীবী, আসামিদের পরিবারের সদস্য এবং ভিকটিম আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ ও বাবা বরকত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ বলেন, রায় বহাল রয়েছে। আমরা অবশ্যই সন্তুষ্ট। আশা করব দ্রুত যে প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলো সম্পন্ন করে যাতে রায় কার্যকর করা হয়।

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, নিম্ন আদালতের রায় বহাল রয়েছে। এ রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর হয়। আমরা আপাতত সন্তুষ্ট। এ রায় দ্রুত কার্যকরে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

সেসময় এক আসামির জেল থেকে পালানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমরা ছয় মাস পরে জানলাম। এটা আমাদের কাছে প্রশ্ন না করে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করাই ভালো। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
এর আগে, শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওইদিন রায় ঘোষণা করেন আদালত।

আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী, রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী ও মোহাম্মদ শিশির মনির।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেন।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান ও মুজতবা রাফিদ।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

আরআর

Share this news on:

সর্বশেষ

img
'খারাপ ব্যাটিং ও বাংলাদেশের দারুণ ফিল্ডিংয়ের কারণে আমরা হেরেছি' Jul 14, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব Jul 14, 2025
img
ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল কি না, জানালেন শেহবাজ Jul 14, 2025
img
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: বিশ্বব্যাংক Jul 14, 2025
img
আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি: শামীম Jul 14, 2025
img
বর্তমান সরকারের সময়ে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চলছে: মির্জা ফখরুল Jul 14, 2025
img
প্রতীক হিসেবে থাকছে ‘নৌকা’, তালিকায় যুক্ত হচ্ছে না ‘শাপলা’ Jul 14, 2025
img
ইতিহাস গড়ার পথে পিএসজি, মৌসুমের দ্বিতীয় ট্রফির জন্য লড়ছে চেলসি Jul 14, 2025
img
আবু সাঈদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীরশ্রেষ্ঠ: আসিফ নজরুল Jul 14, 2025
সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে নামছে সরকার Jul 14, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 14, 2025
'৪ হাজার ৯৭৮ জন হাজিকে উদ্বৃত্ত ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত দেওয়া হবে' Jul 14, 2025
চেকপোস্ট দেখে পালানোর চেষ্টা, দৌড়ে ধরলেন র‍্যাব কর্মকর্তা Jul 14, 2025
img
হৃদয় আর লিটনের পার্টনারশিপটা তখন খুব দরকার ছিল: শামীম Jul 14, 2025
img
কোটা ব্যবস্থা নিয়ে নিজের অবস্থান জানালেন আসিফ নজরুল Jul 14, 2025
img
তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি, বিএনপির মশাল মিছিল Jul 14, 2025
img
স্টেডিয়ামে সাকিবের প্ল্যাকার্ড নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিসিবির মন্তব্য Jul 13, 2025
img
আবারও খালেদের ৪ উইকেট, গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুরের নাটকীয় জয় Jul 13, 2025
img
ঝালকাঠিতে এনসিপির জুলাই পদযাত্রায় বৈষম্যবিরোধীদের বাধা Jul 13, 2025
img
এনসিপির কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপেক্ষার অভিযোগ Jul 13, 2025