কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে : রিজওয়ানা হাসান

ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। জনগণের টাকায় সরকার শতকোটি টাকা ব্যয় করে এই খাল যখন পুনঃখনন করে দেবে, জনগণ যেন তখন এই খালটাকে আর নোংরা না করে,  বলেছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (১২ মে) সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা খাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় উপদেষ্টা খালের প্রাণপ্রবাহ ঠিক রাখতে এখানকার ওয়ার্ডভিত্তিক, মহল্লাভিত্তিক জনগণের একটা মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, এ খালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এ খালের সঙ্গে দুটি বড় নদীর সংযোগ রয়েছে। একটা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, আরেকটা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী।

সরকার তখনই আপনার জন্য কাজ করবে যখন আপনি নিজে সজাগ হবেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সরকার যতই কাজ করে দিক না কেন, সব গার্মেন্টসের মালিক যদি মনে করে যে, তারা তাদের সব ঝুট-কাপড় এখানে ফেলবে, পৌরসভা যদি মনে করে যে তার যত বর্জ্য আছে সে এখানে ফেলবে, তাহলে আর শতকোটি টাকার প্রকল্প দিয়েও কোনো কাজ হবে না।

তিনি বলেন, খালটা আমার দেখতে আসার কারণ হলো যে, এ খালটি পুনঃখননের জন্য যে প্রকল্প পাস করা হয়েছে, সে প্রকল্প কতটুকু যৌক্তিক। এটার যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেটা কতটুকু যৌক্তিক, এটা দেখতে আসা। প্রকল্পের আওতায় ১৪.২৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখানে এসে যা দেখলাম, খালটাই আবার অনেক জায়গায় নতুন করে খনন করতে হবে। এখানে খালের প্রবাহ বলতে আসলে কিছু নেই এবং এখানে কেবল যে খাল খনন করতে হবে তা না, এখানে খালের পাড় বাঁধাইয়ের ব্যাপার আছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপার আছে।

তিনি বলেন, খালের পাশে হাঁটার রাস্তা করে না দিলে এখানে আবারও খাল দখল হয়ে যেতে পারে। এখানে এসে যেটা শুনলাম, এখন যে কাজটা করা হচ্ছে খালের মাটি কাটার কাজ অর্থাৎ খননের কাজ এটা হচ্ছে সিটি জরিপ অনুযায়ী। প্রকল্পে আসলে আছে সিএস জরিপ অনুযায়ী। সিএস জরিপ অনুযায়ী খালটা অনেক বেশি প্রশস্ত। সেজন্য আমার উপলব্ধিটা নিজে বোঝার জন্য এখানে এসেছি।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ খালটাতে পানির প্রবাহ ফেরত আনা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এখন তো খালের ওপর আমি শুধুমাত্র প্লাস্টিক আর ময়লা-আবর্জনা দেখে এলাম।

তিনি বলেন, এ প্রকল্প এই জুনে শুরু হয়ে আগামী জুন-জুলাইয়ে যখন শেষ হবে তখন অন্তত খালের অবয়বটা আপনারা দেখতে পাবেন।

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে উপদেষ্টা উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি ঢাকার খালগুলোর নিচটা গভীর করে দেই, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেই, তাহলে আশা করি এবার জলাবদ্ধতা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে।

তিনি বলেন, যদি জলাবদ্ধতা কোনো জায়গায় হয়েও থাকে, সিটি কর্পোরেশনের লোকজন মাঠে থাকবে, ড্রেন পরিষ্কার করে বা দরকার হলে পাম্প করে নগরবাসীকে এবার জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেবে।

ঢাকা শহরে বৃক্ষরোপণ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা শহরে গাছ লাগানোর জায়গা খুব কম। একটা সমাধান হচ্ছে খালগুলোর পাড়ে গাছ লাগিয়ে দেওয়া। সিটি কর্পোরেশনগুলো সে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সেখানে বন বিভাগ সহায়তা দিচ্ছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সহায়তা দিচ্ছে এবং আমাদের চিন্তাটা হলো কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণটা আমরা করবো, যাতে করে কমিউনিটিরও একটা মায়া থাকে, তারা যেন গাছের দেখাশোনা করেন।

এসময় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিকল্পনা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রাফিউজ সাজ্জাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত-সহ ঢাকা জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অনুভূতিতে নাড়া দিতে না পারলে, ভাল ছবি বলা যাবে না: শাশ্বত চ্যাটার্জি Dec 21, 2025
img
ঢাবির স্থগিত হওয়া বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর Dec 21, 2025
img
বাংলাদেশি হাইকমিশনারের মালদ্বীপের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ Dec 21, 2025
img
আতিফ আসলামের স্থগিত হওয়া কনসার্ট নিয়ে এলো সুখবর Dec 21, 2025
img
বেগুনি রঙের পোশাকে নজর কাড়লেন চিত্রনায়িকা বুবলী Dec 21, 2025
img
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি Dec 21, 2025
img
ফিফার সেরা একাদশে রাফিনিয়া না থাকায় ক্ষুব্ধ ফ্লিক Dec 21, 2025
img
চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী বুইশ্যা আটক Dec 21, 2025
img
হাদির সমাধিস্থল নিয়ে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বানোয়াট-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : ডিএমপি Dec 21, 2025
img
বানারীপাড়ায় কেন্দ্রীয় আ. লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার Dec 21, 2025
img
শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করলেন জকসুর শিবির প্যানেল Dec 21, 2025
img
টেস্টের ইতিহাসে প্রথমবার দুই ইনিংসেই জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড Dec 21, 2025
img
অ্যাভাটারে গান গেয়ে মাইলি সাইরাসের হাতে উঠছে আন্তর্জাতিক সম্মাননা Dec 21, 2025
img
৩ বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সিইসি Dec 21, 2025
img
৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা সময় গোলহীন ভিনিসিয়ুস Dec 21, 2025
img
সারা দেশে তাপমাত্রা কমবে ৩ ডিগ্রি, বাড়বে শীতের তীব্রতা Dec 21, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৯ জনের টটেনহ্যামকে ২-১ গোলে হারাল লিভারপুল Dec 21, 2025
img
ছায়ানটে হামলার ঘটনায় সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Dec 21, 2025
img
ফের ইরানে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল Dec 21, 2025
img
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পুতিন Dec 21, 2025