ইরাকের এক সময়ের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিলাসবহুল প্রাসাদটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ নিয়েছে। সাদ্দামের অন্যতম নজরকাড়া আল-ফাও প্রাসাদটি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বাগদাদ (এইউবি) নামে। এবার সেখান থেকেই প্রথমবারের মতো স্নাতক সমাবর্তন উদযাপন করল ইরাকি শিক্ষার্থীরা।
গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন- মোট ৩৮ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী স্নাতক সম্মান লাভ করেন। ব্যবসা প্রশাসন, বিজ্ঞান এবং মানবিক শাস্ত্রে তারা ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বিশিষ্টিজন, শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সোমবার মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে উঠে আসে এমনই তথ্য।
সাদ্দাম হোসেনের আল-ফাও প্রাসাদটি স্থানীয়দের কাছে ‘ওয়াটার প্যালেস’ নামেও পরিচিত। ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত প্রাসাদটি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে, টাইগ্রিস নদী থেকে একটি কৃত্রিম হ্রদের মাঝে অবস্থিত। প্রাসাদটিতে মোট ৬২টি কক্ষ। দেয়াল-ছাদ-স্তম্ভ সবখানেই সাদ্দামের নাম খোদাই করা।
প্রবেশের পরপরই চোখে পড়বে দীর্ঘ ১০ মিটার উচ্চতার কারুকার্যখচিত একটি প্রধান দরজা। অন্দরমহলে মার্বেল মেঝে, সোনার প্রলেপযুক্ত বাথরুম, ২৫ ফুট উচ্চতার ছাদ। বিশাল ঝাড়বাতি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে ইরাকি বাহিনী আল-ফাও উপদ্বীপ পুনরুদ্ধার করেন। এরপরই বিজয় উদযাপন করতে সাদ্দাম হোসেন প্রাসাদটি নির্মাণের নির্দেশ দেন। ১৯৯০ দশকে প্রাসাদটি নির্মাণকাজে প্রায় ২,০০০ শ্রমিক নিযুক্ত ছিলেন। যাদের মধ্যে মরক্কো, মিসর, সুদান ও ইরাকের কারাবন্দিরাও ছিলেন।
প্রাসাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের গল্প
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের পর প্রাসাদটি মার্কিন বাহিনীর সদর দপ্তর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পরে ইরাকি উদ্যোক্তা সাদি সাইহুদের অর্থায়নে এটি একটি আমেরিকান আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণের মূল লক্ষ্য ছিল ইরাকে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠা করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. মাইকেল মুলনিক্স বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বিভিন্ন খ্যাতনামা ভ্যান্ডারবল্টি ইউনিভার্সিটি, কলোরাডো স্কুল অব মাইনস, লরেন্স টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি, টেম্পল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার এবং রোমের সাপিয়েনজা ইউনিভার্সিটির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ ও অবহেলার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি স্থাপনা আজ একটি মর্যাদাপূর্ণ, অলাভজনক একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে’।
স্নাতক মোহাম্মদ বাকির বলেন, ‘ইরাকে ভবিষ্যৎ সহজ নয়। আমাদের সবার উদ্বেগ রয়েছে। তবে এইউবির মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি। যদিও আমার শিক্ষা খরচ প্রায় ১০ মিলিয়ন ইরাকি দিনার ছিল, তবে এটি একটি মূল্যবান বিনিয়োগ ছিল’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা সাদি সাইহুদ উল্লেখ করেন, যদিও সরকারি চাকরির সুযোগ সীমিত, এইউবির শিক্ষার্থীরা বেসরকারি খাতে এবং উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছেন।
এফপি