না ফেরার দেশে কেনিয়ান সাহিত্যিক গুগি ওয়া থিয়ঙো

কেনিয়ান সাহিত্যিক গুগি ওয়া থিয়ঙো গত ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কন্যা লেখিকা ওয়ানগুগি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

থিয়ঙো পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক ছিলেন। তার সাহিত্যে ফুটে উঠেছে পূর্ব আফ্রিকার মানুষের জীবনচিত্র। পাশ্চাত্যধারার সাহিত্যরীতি অনুসরণ না করা তিনি প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি কেনিয়ার সেন্ট্রাল লিমুরু নামক অঞ্চলে তার জন্ম। জেমস্ গুগি ছিল তার পিতৃপ্রদত্ত নাম। জন্মের পর দীর্ঘ ২৫ বছর তার বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনে কাটে। তিনি উত্তর উপনিবেশিক কেনিয়ার সমালোচক ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেনিয়ার রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও নব্য ধনিক শ্রেণীর হানাহানিকে তিনি ‘আশার মৃত্যু, স্বপ্নের মৃত্যু ও সৌন্দর্যের মৃত্যু’’ হিসেবে অবহিত করেন। ফলে তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এএফপি কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ভাষার সমতায় বিশ্বাস করি। ভাষার মর্যাদার বিভাজন আমাকে ভীত করে তোলে।’

১৯৭০ সালে তিনি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা বন্ধ করে দেন। তিনি তাঁর জাতীয় ভাষা সোয়াহিলি ও অঞ্চলিক ভাষা কিকুয়ু তে সাহিত্য রচনা শুরু করেন। তার সিদ্ধান্ত সে সময় অনেকের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠেনি। কেনিয়ান লেখক ডেভিড মাউলি বলেন, ‘আমরা তাকে এই সাথে পাগল ও সাহসী মনে করতাম। আমরা ভেবেছিলাম, এ ভাষায় বই লিখলে কে তার বই কিনবে।’ মূলত বি-উপনিবেশায়ন আন্দোলনের জন্য তিনি তার নাম পরিবর্তন করেছিলেন এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা বন্ধ করেছিলেন।

প্রথম দিকে তার সাহিত্যের উপাদান ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আফ্রিকানদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত চলা ভয়ংকর মাউ মাউ যুদ্ধ।

১৯৭৭ সালে গুগি ও তার সঙ্গী নাট্যকার এনগুগি ওয়া মিরি একটি নাটক মঞ্চায়ন করেন। ফলে তাদের কারাবরণ করতে হয়। এ ঘটনার পর তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘ডেভিল অন দি ক্রস’ রচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও ব্রডকাস্টার এনপিআর কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার প্রথম উপন্যাস লেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি টয়লেট পেপারে উপন্যাসটি লিখেছিলেন। কারণ, তার কাছে অন্য কোনো উপকরণ ছিল না। ১৯৭৮ সালে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি কামিটি ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজন থেকে কারামুক্ত হন।

‘দ্যা রিভার বিটউইন’ উপন্যাসে তিনি আফ্রিকায় খ্রিষ্টধর্মের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তার মতে, সাদা মানুষদের ধর্ম আফ্রিকানদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং আফ্রিকানদের সমঅধিকার প্রদান করে না। কেনিয়ার সরকার থিয়েটার গ্রুপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ১৯৮২ সালে তিনি কেনিয়া ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে সেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যান।

২০০৪ সালে দেশে ফিরে আসলে তিনি নাইরোবি বিমানবন্দরে জনরোষের শিকার হন। কিছুদিন পর তার উপর একদল সশস্ত্র মানুষ হামলা চালায়। তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয় এবং তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এই হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।

মার্গারেটা গ্যাচেরু একজন সমাজবিজ্ঞানী ও গুগির সাবেক শিক্ষার্থী। তার মতে, ঙ্গোহে হলেন কেনিয়ান তলস্তয়।

সূত্রঃ দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বলিউডে নিজের অবস্থান ও জীবন দর্শন শেয়ার করলেন রাজকুমার Nov 17, 2025
img
নিকুঞ্জে ডিএনসিসির উচ্ছেদ: ফুড কোর্ট অক্ষত, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী! Nov 17, 2025
img
‘রায় দিলো, আব্বুকে ফোন করলাম, কাঁদলাম!’ Nov 17, 2025
img
পারিশ্রমিক নয়, চরিত্রকেই সবসময় গুরুত্ব দেই : দীপিকা Nov 17, 2025
img
বিবাহবার্ষিকীর দিনেই দেওয়া হলো শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় Nov 17, 2025
img
মিস ইউনিভার্স বিজয়ী হলে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ পাবেন কত টাকা? Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনার নামের আগে ‘খুনি’ না লিখলে গণমাধ্যমও অপরাধী: হাদি Nov 17, 2025
img
নেটপাড়ায় জিতুর মানবিক বার্তা Nov 17, 2025
img
পল্লবীতে দোকানে ঢুকে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা Nov 17, 2025
img
দণ্ডিত হাসিনাকে দ্রুত ফেরত দিতে হবে : রাশেদ খাঁন Nov 17, 2025
মাত্র ১২ বছর বয়সে পেশাদার সংগীত যাত্রা শুরু রুনা লায়লার Nov 17, 2025
বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষে নিভে গেল ৪২ প্রাণ, মোদির শোক Nov 17, 2025
img
নতুন ৩ দেশসহ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল ৩২ দল Nov 17, 2025
‘হাজারবার ভাঙলেও তোরা ৩২ নম্বরের ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবি না’ Nov 17, 2025
img
শুধু হাসিনা-কামালের বিচার হলে তা অসম্পূর্ণ হবে: নুর Nov 17, 2025
img
কঠোর পরিশ্রম ও সততা সফলতার মূল চাবিকাঠি : শ্রেয়া ঘোষাল Nov 17, 2025
img
বড় সুখবর পেল পাকিস্তান Nov 17, 2025
img
খুনি হাসিনার একবার ফাঁসি যথেষ্ট নয় : শিবির সভাপতি Nov 17, 2025
img
হাসিনাকে নিয়ে আব্বার ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস ছিল : হুম্মাম কাদের Nov 17, 2025
img
নভেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৭০ কোটি ডলার Nov 17, 2025