মশা নিধনে অভূতপূর্ব সাফল্য চীনের

মশা নিয়ে যখন বাংলাদেশের মানুষ ভয়ঙ্করভাবে উদ্বিগ্ন তখন মশক নিধনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে চীন। দেশটির দুটি দ্বীপ প্রায় সম্পূর্ণভাবে আক্রমণকারী মশা মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ চীনের গুয়াংঝু শহরের পাশ্ববর্তী দুটি দ্বীপ থেকে এশিয়ান টাইগার জাতীয় স্ত্রী মশার বংশবৃদ্ধি ৯৪ থেকে ৯৭ ভাগ হ্রাস করা গেছে। এই মশা রোগ সংক্রামণ ও মৃত্যুর হার বাড়ানোর অন্যতম উৎস।

পৃথিবীতে গবেষকরা এবারই যে প্রথম মশা নিধনে এমন সাফল্য দেখালেন তা নয়। এর আগে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীরা জিন-ব্যবস্থাপনা করেছিলেন, যাতে মশার বীজ উৎপাদন হতে না পারে। কেননা তারা বুঝতে পারেন যে পুরুষ মশাদের উন্নতি মানেই স্ত্রী মশাদের বংশ বিস্তার।

চীনের ওই গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জী জিয়াং দীর্ঘদিন ধরে এই গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি দক্ষিণ চীনের একটি মশার ফ্যাক্টরিতে পুরুষ মশাদের নিস্ক্রিয় করতে কাজ করেন।

চীনা গবেষণার গবেষকদের মধ্যে একজন, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জী জিয়াং, এই গবেষণায় দীর্ঘদিন ধরে অগ্রগামী ছিলেন। দক্ষিণ চীনের একটি মশার কারখানার কাজ চলাকালীন, তিনি পূর্বে নিষ্ক্রিয় মহিলা মশার সাথে মেলামেশা করতে নির্বীজিত পুরুষ মশা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন।

মূলত প্রাণসংহারী রোগ ঠেকাতে দেশটিতে মশা প্রতিরোধে মশার ব্যবহারের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিলো এটি তারই ধারাবাহিকতা। ২০১৬ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের বিষয়ে এই গবেষক গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, খারাপ মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ওই ফ্যাক্টরীতে ভাল মশা উৎপাদন করা হবে। যার মধ্যে ব্যাক্টেরিয়ার প্রবেশের সাহায্যে স্ত্রী মশার প্রজননে আনা হবে পরিবর্তন। এভাবেই মশাগুলো হবে জীবাণুমুক্ত।  

তিনি আরো বলেন, ইবোলা, জিকা কিংবা এ ধরণের প্রাণঘাতি রোগের প্রকোপ ঠেকাতে জায়গা বিশেষে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামিত মশার ঝাঁক ছাড়া হচ্ছে। এই ভাবে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লক্ষ্য বিশেষ সংক্রামিত মশা ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১২ সালে ৩৫০০ বর্গমিটার জমির ওপর নিজের 'মশা কারখানা'র পত্তন করেন শি। গুয়াংঝৌ শহরের বাইরে ওই দ্বীপে দু'টি বসতিতে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামিত মশার ঝাঁক ছাড়া হয়। এর ফলে দ্বীপের মশার সংখ্যা অন্তত ৯০% হ্রাস পেয়েছে বলে শি-এর দাবি।

গত বুধবার আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষক দল পুরুষ ও মহিলা উভয়কে পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতা সীমিত করে মশার সংখ্যা কমাতে সক্ষম হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, মহিলা মশার নিম্ন স্তরের বিকিরণে নির্বীজন করা হয়েছিল, যখন পুরুষরা ওলখাবিয়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত হয়েছিল, তখন উভয়ই ২০১৬ ও ২০১৭ মশাদের প্রজনন ঋতুতে গুয়াংঝু শহরের কাছাকাছি দুটি দ্বীপে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলাফল এত সফল ছিল যে তারা প্রায় দুইটি দ্বীপে সমগ্র মাশাখির জনসংখ্যা প্রায় নির্মূল করেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এশিয়ান টাইগার মশা সাধারণত প্রচলিত ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এদেরকে কীটনাশক কিংবা পয়ো:নালার পানি অপসারণ করে স্থায়ীভাবে দমন করা কঠিন।

ওই গবেষণায় এই মশাকে সাদা চোরাগোপ্তা মশা উল্লেখ করে বলা হয়, এই প্রজাতিটি অত্যন্ত আক্রমনাত্মক। বিগত চার দশকে এই মশা এশিয়া থেকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও এই মশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণী বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির ভাষ্য মতে-এর কামড়ে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মত জ্বর খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

গুয়াংঝু একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর শহর। এখানের জনবসতিও বেশি। এককথায় বসতিতে ঠাসা এ শহরে ২০১৪ সালে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসময় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এ জ্বরে।

চলতি বছর এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে মারা গেছে অন্তত ৪৫০ নাগরিক। পরে দেশটি ‘জাতীয় ডেঙ্গু সতর্কতা’ কর্মসূচী ঘোষণা করে।

এদিকে বাংলাদেশেও চলতি বর্ষা মৌসুমে শুরু হয় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে বেশকিছু মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কিংবা চীনের মতো মশার উৎপাদন হ্রাসে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

 

টাইমস/এমএস

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ