বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনার মাঝে ট্রাম্প-শি'র ‘খুব ভালো’ফোনালাপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ‘খুব ভালো’ এক ফোনালাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। দুই নেতা পরস্পরকে তাদের নিজ নিজ দেশে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ট্রাম্প বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাতের দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ফোনালাপ হলো।

এ ছাড়া ফোনালাপটি এমন এক সময় ঘটল, যখন জেনেভায় গত মাসে করা বাণিজ্যযুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা একে অপরকে সেই সমঝোতা ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ করছে।ফোনালাপের পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্লাটফরমে লেখেন, ‘ফোনালাপটি প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং এটি দুই দেশের জন্যই খুব ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বয়ে এনেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য দলগুলো ‘অচিরেই’ নতুন একটি বৈঠক করবে জানিয়ে ট্রাম্প আরো লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি আন্তরিকতার সঙ্গে ফার্স্ট লেডি ও আমাকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমিও পাল্টা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। দুটি মহান দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ ধরনের সফরের জন্য আমরা দুজনই উন্মুখ হয়ে আছি।

এর আগে ট্রাম্প বুধবার তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছিলেন, ‘আমি চীনের প্রেসিডেন্ট শিকে পছন্দ করি, সব সময় করেছি, ভবিষ্যতেও করব, কিন্তু তিনি খুব কঠিন একজন মানুষ এবং তার সঙ্গে চুক্তি করা ভীষণ কঠিন!’

হোয়াইট হাউস এই ফোনালাপ নিয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, শির সঙ্গে কথা ট্রাম্প বলতে পারেন।
অন্যদিকে চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ফোনালাপটি ট্রাম্পের অনুরোধে হয়। শি ট্রাম্পকে বলেছেন, দুই দেশের উচিত পারস্পরিক সম্পর্কের ‘পথ সোজা’ করা।

তিনি আরো বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিশাল জাহাজটির পথ সঠিক করতে হলে আমাদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে হবে এবং সুস্পষ্টভাবে পথ নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন রকমের হস্তক্ষেপ এবং এমনকি ধ্বংসাত্মক প্রভাব দূর করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

এই ফোনালাপের আগে দুই নেতার মধ্যে কোনো নিশ্চিত যোগাযোগ হয়নি গত পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে, যদিও রিপাবলিকান নেতা হিসেবে ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর প্রায়ই দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে শিগগিরই ফোনালাপ হতে যাচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এপ্রিলের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, শি তাকে ফোন করেছিলেন। তবে বেইজিং জানায়, সম্প্রতি এমন কোনো ফোনালাপ হয়নি।

চুক্তি নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ
এদিকে জেনেভায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যের ওপর অত্যধিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য কমাতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে দুই পক্ষই চুক্তি ভঙ্গের দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে।

ট্রাম্প গত শুক্রবার বলেন, চীন ‘চুক্তিটি পুরোপুরি লঙ্ঘন করেছে’, তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

অন্যদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই সপ্তাহে পাল্টা অভিযোগ তোলে, ট্রাম্প প্রশাসন ‘বৈষম্যমূলক ও বিধি-নিষেধমূলক পদক্ষেপ’ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল।

যুক্তরাষ্ট্র বৈধ ও অবৈধভাবে প্রবেশ করা চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ট্রাম্প চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা কড়াভাবে বাতিলের অঙ্গীকার করেছেন।

ট্রাম্প এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেন, যার মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘লুটেপুটে নেওয়া’ ও বাণিজ্য ঘাটতির জন্য অভিযোগ তোলেন। তবে তিনি সবচেয়ে উচ্চ শুল্কগুলোর ওপর সাময়িক বিরতি দেন, যার ফলে বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়।

দুই পক্ষ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্প পৃথকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলেন। তিনি বুধবার থেকে বিশ্বব্যাপী স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এমআর


Share this news on:

সর্বশেষ

img

সম্মিলিত ছাত্র সংসদের বিবৃতি

হাসিনার পক্ষ নেওয়া শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করতে হবে Nov 18, 2025
img
বিরল রোগে আক্রান্ত ‘দঙ্গল’ অভিনেত্রী ফাতিমা সানা শেখ Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রায় দ্রুত কার্যকর করা জরুরি: ছাত্রশি‌বি‌র সভাপ‌তি Nov 18, 2025
img
প্রকাশ হলো ট্রেলার, দুই পর্বে মুক্তি পাবে রণবীরের সিনেমা Nov 18, 2025
img
১৫ মাসেই প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রেসসচিব Nov 18, 2025
img
সূচকের বড় উত্থান পুঁজিবাজারে Nov 18, 2025
img
কারিশমার সন্তানদের মাসিক খরচ বন্ধ Nov 18, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলের বৈঠক Nov 18, 2025
img
বাতিল হলো ৫৩ ‘জুলাই যোদ্ধার’ গেজেট Nov 18, 2025
img
সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত যে রায় দিয়েছেন তা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওনা শাস্তি: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ Nov 18, 2025
img
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভীকে আরও ৫ মামলায় গ্রেপ্তার Nov 18, 2025
img
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি পেলেন বাবর Nov 18, 2025
img
আমজনতার দলসহ ৭টি দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে ইসি Nov 18, 2025
img

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ

ভোট দিতে পারবেন ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন Nov 18, 2025
img
ইউনিসেফ থেকে ৪২০ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত Nov 18, 2025
img
জুলাইয়ের আবহ ফেরাতে কনসার্ট, থাকবেন আতিফ আসলাম Nov 18, 2025
img
একদিনে ডেঙ্গুতে ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২০ জন Nov 18, 2025
img
জীতু-দিতিপ্রিয়ার দ্বন্দ্বে অনিশ্চয়তায় জনপ্রিয় ধারাবাহিক Nov 18, 2025
img
'সোলজার'-এর ফার্স্ট লুকে ভিন্ন এক তিশা Nov 18, 2025