ইসরায়েলে নতুন করে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সমন্বয়ে হাইব্রিড হামলা শুরু করেছে ইরান। নতুন এ হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম। সর্বাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙেচুড়ে ইসরায়েলের একের পর এক শহরে আঘাত হানছে ডজন ডজন মিসাইল।
সোমবার (১৬ জুন) মধ্যরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও সংবাদসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা এবং অন্যান্য শহরে নতুন এ হামলা শুরু করেছে ইরান। এরই মধ্যে ইসরায়েলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবগুলো স্তরগুলো ভেদ করে বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হেনেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। যদিও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এ নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
বিবিসি বলছে, জেরুজালেম এবং তেল আবিবের রাতের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কারণ ‘আয়রন ডোম’ ইরান থেকে আগত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। সেখানে সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটতে বলা হয়েছে।
বিস্ফোরণের চিত্র ধরা পড়েছে হাইফা শহরেও। সেখানকার একটি ভবনে সরাসরি মিসাইল আঘাত হানার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলি ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসও।
এদিকে ইরানের এমন ক্ষেপণাস্ত্রের বহর দেখে হতবাক হয়ে গেছে শত্রুপক্ষও, কারণ তাদের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এক প্রকার ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র। এমনই তথ্য জানিয়েছেন ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম দ্য লোকাল কলের সম্পাদক মেরন র্যাপোপোর্ট।
র্যাপোপোর্ট আল জাজিরাকে বলেছেন, যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এটি (ইরানের হামলা) প্রত্যাশিত ছিল বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইসরায়েলিরা বেশ অবাক যে এত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিছু কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতেও সফল হয়েছে এবং কিছু ঘটনা সম্ভবত জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হয়নি।’
এর আগে, রোববার মধ্যরাতেও ইরান যেসব মিসাইল হামলা চালিয়েছে সেগুলোর বেশ কয়েকটি সরাসরি আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে। এতে অন্তত ১০ জন নিহত ও দুইশর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন দেশটিতে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ বড় ধরনের হামলা করে বসে ইসরায়েল। এরপর সারাদিনই দেশটিতে হামলা অব্যাহত রাখে তারা। ভয়াবহ এ হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান জেনারেল হোসাইন সালামিসহ অন্তত ২০ জন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বাহিনীটির নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
দায়িত্ব নিয়েই ইসরায়েলের উদ্দেশে কঠিন হুঁশিয়ারি দেন নতুন আইআরজিসি প্রধান। তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলার জবাবে শিশু হত্যাকারী জায়নবাদী শাসকের জন্য শিগগিরই জাহান্নামের দরজা খুলে যাবে।
নতুন আইআরজিসি প্রধানের এ বার্তার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ইসরায়েলে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে এ অভিযান শুরু করে ইরান। এরপর থেকে একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষই। ক্রমেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে দুইদেশের এ সংঘাত।
এসএম