ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ইরান পিছিয়ে পড়ছে এমন মন্তব্য করে ইরানকে দ্রুত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডার কানানাসকিসে জি-৭ সম্মেলনে সোমবার (১৬ জুন) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “তাদের (ইরানের) এখনই আলোচনায় বসা উচিত। দেরি হলে আর কিছুই করার থাকবে না। এই যুদ্ধ দু’পক্ষের জন্যই যন্ত্রণাদায়ক, তবে আমার মতে ইরান এই যুদ্ধে হারছে। তাই এখনই সময় কথা বলার।”
এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই যুদ্ধ দ্রুতই পশ্চিম এশিয়াজুড়ে বিস্তৃত হতে পারে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ছায়াযুদ্ধ সরাসরি সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
ইসরায়েল গত শুক্রবার থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, জ্বালানি গুদাম ও বিমানবন্দরেও চালানো হয়েছে হামলা। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত ও ১,২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
ইরানও পাল্টা প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের শহর ও বসতিতে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত ও ৫৯২ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানে একাধিক সামরিক কমান্ড সেন্টার, মিসাইল লঞ্চার ও পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, “আমরা তেহরানের আকাশপথে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এক-তৃতীয়াংশ সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করে দিয়েছি।”
ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের মুখপাত্র রেজা সাইয়াদ জানান, ইসরায়েলের “সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ” নিরাপত্তা স্থাপনাসহ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের বাড়িঘর টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হবে। ইসরায়েলের আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।”
ইসরায়েল দাবি করছে, ইরান সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে। অপরদিকে, ইরান বলছে, তারা প্রতিরোধ যুদ্ধে লিপ্ত এবং যুদ্ধটি আর কূটনৈতিকভাবে সীমাবদ্ধ নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ এখন কেবল সামরিক নয়, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রোপাগান্ডার দিক থেকেও ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কায়।
আরএম/টিএ