গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে এবার ইরানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েল। চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমেছে তেলআবিব ও তেহরান। এরই মাঝে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল যুক্তরাজ্য।
সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’ একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে ইসরায়েলের বহু দশকের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল কৌশলগতভাবে চুপ থাকলেও তাদের কাছে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পরমাণু অস্ত্র। অথচ কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তিতে না থাকা সত্ত্বেও দেশটির ওপর প্রায় কোনো আন্তর্জাতিক চাপ নেই।
বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)’ এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের কাছে বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে। আরও প্রায় ২০০টি ওয়ারহেড তৈরির জন্য উপাদান মজুদ রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।
১৯৫০-এর দশকে ফ্রান্সের সহায়তায় গড়ে তোলা ‘ডিমোনা চুল্লি’ ছিল এই গোপন কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু। জনসমক্ষে এটি বেসামরিক প্রকল্প হিসেবে পরিচিত হলেও, এটি থেকে শতাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির উপযোগী প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
১৯৮৬ সালে ডিমোনার একজন টেকনিশিয়ান মরদেখাই ভানু প্রথম এই গোপন তথ্য ফাঁস করেন। ‘দ্য সানডে টাইমস’ পত্রিকায় তার দেয়া তথ্য ও ছবিই ইসরায়েলের পারমাণবিক সক্ষমতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ে ওঠে।
তবে পরবর্তীতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাকে অপহরণ করে দেশে ফিরিয়ে এনে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়, যা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দিত হয়।
প্রতিবেদনটি আরো জানায়, কৃত্রিম দেয়াল, গোপন এলিভেটর ও নানা কৌশলে আন্তর্জাতিক ও মার্কিন পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করেছে ইসরায়েল। বহুবার শান্তিপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও বাস্তবে তা ছিল একটি গোপন সামরিক কর্মসূচি।
অভিযোগ রয়েছে, ভারত, পাকিস্তান কিংবা উত্তর কোরিয়ার ওপর যেমন নিষেধাজ্ঞা বা যাচাই-বাছাই চালানো হয়, ইসরায়েলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা মিত্ররা এখনো ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে—যা তাদের নিজস্ব নিরস্ত্রীকরণ নীতির বিরোধী।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সির বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করতে চাইলেও বারবার বাধা দিয়েছে ইসরায়েল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্য সামনে আসার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েলের অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে।
আরআর/টিএ