টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর দুটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। এতে ফুলগাজী বাজার ও উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে বাঁধ ভেঙে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিক পাড়া গ্রামের সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ এবং গোসাইপুর এলাকা অংশে সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বিজয়পুর, বণিকপাড়া, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, করইয়া ও নীলক্ষী গ্রাম প্লাবিত হয়।
এর আগে ঐদিন সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়াল উপচে মুহুরী নদীর পানি বাজারে প্রবেশ করে। রাতভর ফুলগাজী বাজার হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত থাকলেও শুক্রবার (২০ জুন) ভোর থেকে বাজারের পানি কমতে শুরু করে। সকালের মধ্যে পুরো বাজার থেকে পানি নেমে যায়। তবে বৃষ্টি বাড়লে আবারও নিমজ্জিত হওয়ার টেনশনে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, সবজিক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। ঘরে ঘরে ঢুকেছে পানি।
ফুলগাজীর স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মজুমদার দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ভয়াবহ বন্যা আতঙ্কে রয়েছি। ফুলগাজী বাজারও হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ীদের। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
ভাঙনের শিকার স্থানীয় বাসিন্দা টিটু জানান, রাতে পানি ঢুকে পড়ে। কিছুই বুঝে ওঠার আগেই উঠানে হাঁটু সমান পানি। বাচ্চাদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় যেতে হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং ফুলগাজী গালর্স স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম।
ল
এদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম ও ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। তারা এ সময় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বাঁধ মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দেন।
পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, বাঁধ মেরামতের বিষয়ে পাউবোর কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। মুহুরী বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে, সেটি আরসিসি ঢালাই করা। মাটির বাঁধের ওপর করা আরসিসি ঢালাইও ধসে পড়েছে। পানি না কমলে তাৎক্ষণিকভাবে এটি মেরামত করা সম্ভব নয়। নদীতে পানি কমলে দ্রুত ভাঙন অংশ মেরামত করা হবে।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। বিষয়টা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কেএন/টিকে