ইরানকে দমন করতে গিয়ে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত নেতানিয়াহু

ইরানের সঙ্গে টানা ১১ দিন যুদ্ধ চালিয়ে অবশেষে থামতে বাধ্য হয়েছে দখলদার ইসরায়েল। যদিও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তারা নাকি সব লক্ষ্য পূরণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। যুদ্ধের শুরুতেই নেতানিয়াহু দুটি ‘স্পষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন সেগুলো হলঃ ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ধ্বংস এবং দেশটির সরকার পত। এই দুইটির মধ্যে কোনোটি বাস্তবে অর্জন হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। তবুও সেটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। তেহরান আগেভাগেই সরিয়ে ফেলেছিল সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ। এটি পারমাণবিক কার্যক্রমের মূল উপাদান। এর মানে, ইসরায়েলের প্রথম লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।

যুদ্ধের শুরুতেই ইসরায়েল ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হত্যা করে বিশৃঙ্খলার বীজ বুনতে চেয়েছিল। তবে উল্টো সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি বিপ্লবী গার্ডের এমন একজন নেতার মৃত্যুর পর, যাকে অনেকে পছন্দ করত না। তিনিও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

ইসরায়েল এভিন কারাগারে বোমা হামলা চালিয়ে রাজবন্দিদের মুক্ত করার মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু ইরান নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বন্দিদের অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে ফেলে, উল্টো সুরক্ষার কঠোরতা বাড়ায়।

রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে হামলা চালিয়ে তথাকথিত মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে চেয়েছিল ইসরায়েল।তবে এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানিরা ইসরায়েলি মিডিয়াকে হুমকি দেওয়া শুরু করে। এটি হয়ে ওঠে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক উল্টোআঘাত। যুদ্ধের সময় সরকারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলেন ইরানিরা।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কেউ ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করেনি। জার্মান চ্যান্সেলর ব্যতিক্রম হলেও, বাকি বিশ্ব ইউরেনিয়াম মজুদের ইরানি অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্ব নেতারা স্পষ্ট বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নয়, বেসামরিক কাজেই ইউরেনিয়াম মজুদ রাখতে পারে।

ইসরায়েল অল্প সময়েই ইরানের আকাশসীমা দখলে নেয়, সেখানে ইচ্ছেমতো হামলা চালায়।কিন্তু ইরানও পাল্টা মিসাইল হামলায় তেল আবিবসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে বড় ধরনের আঘাত হানে, যেখানে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়।

যুদ্ধের মধ্যভাগেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মিসাইল দ্রুত ফুরিয়ে আসতে থাকে।বিশেষজ্ঞদের মতে, আর কিছুদিন যুদ্ধে থাকলে তারা ইরানের মিসাইল আটকাতেই পারত না। এবং এই মিসাইল সরবরাহ পুনরায় সম্ভব হতো না তাৎক্ষণিকভাবে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলি অর্থনীতি পুরোপুরি থমকে যাওয়ার পথে ছিল। যা ইরানের জন্য আরেকটি বিজয়।

ইরানের বহু অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু তারা চূর্ণ হয়নি। বরং বিশাল শক্তিধর ইসরায়েলের মুখোমুখি হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাদের আন্তর্জাতিক ‘ইমেজ’ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিনেমার সেটে অশালীন আচরণের অভিযোগ এষা গুপ্তের! Jun 25, 2025
img
এক ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার প্রস্তাবে একমত বিএনপি! Jun 25, 2025
বাস্তবেও ‘অঞ্জলি’র মতো মায়ের ভূমিকায় কাজল Jun 25, 2025
img
এনবিআরে চলমান অযৌক্তিক আন্দোলনে কিছু ব্যবসায়ীদের ইন্ধন থাকতে পারে: সালেহ উদ্দিন আহমেদ Jun 25, 2025
img
সাকিবকে ছাড়িয়ে রেকর্ডের শীর্ষে মুমিনুল Jun 25, 2025
img
আওয়ামী ফ্যাসিবাদে সব ধরনের নাগরিক স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছিল: তারেক রহমান Jun 25, 2025
img
প্রেমের পর্দায় নতুন অধ্যায়, ধনুশের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন কৃতী Jun 25, 2025
নিউইয়র্কে মেয়র হতে যাচ্ছেন জোহরান মামদানি Jun 25, 2025
সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা গেল ইরানি জেনারেল Jun 25, 2025
img
তামান্নার পর ফাতিমা? বিজয় ভার্মার নতুন প্রেম না কি শুধুই প্রচার! Jun 25, 2025
img
উপদেষ্টা আসিফকে ক্ষমা চাইতে হবে: ইশরাক হোসেন Jun 25, 2025
img
আমি নির্দোষ, কোনো অপরাধ করিনি: পলক Jun 25, 2025
img
'বর্তমান নির্বাচন কমিশনেই জামায়াত আস্থা রাখতে চায়' Jun 25, 2025
img
‘রুসলান’ ছবির লড়াই দৃশ্যে চোট, অবহেলায় বড় অস্ত্রোপচার আয়ুষ শর্মার Jun 25, 2025
img
গ্রেফতার আদেশের পরও আদালত প্রাঙ্গণে হাস্যোজ্জ্বল ইনু Jun 25, 2025
img
আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা বাতিলে ইরানি পার্লামেন্টের সম্মতি Jun 25, 2025
img
কূটনীতি শুধু পুরুষের জন্য নয়: ব্রিটিশ হাইকমিশনার Jun 25, 2025
img
জুলাইয়ে ঢাবিতে হামলাকারীদের তথ্য প্রদানের সময় বাড়ল Jun 25, 2025
img
কারামুক্ত হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরলেন নোবেল Jun 25, 2025
img
কারিশমার জন্মদিনে আবেগঘন পোস্ট করলেন কারিনা কাপূর! Jun 25, 2025