মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ২০ মাসে ৩৫ হাজার হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহুর দেশ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরাইলের যুদ্ধক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। গত প্রায় দুই বছর ধরে টানা বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলা করে চলেছে প্রতিবেশি পাঁচটি দেশে।

এক প্রতিবেদন মতে, গত ২০ মাসে ফিলিস্তিনের পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেনে ৩৫ হাজারের বেশি হামলা চালিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাহিনী। গাজায় গণহত্যা চালিয়ে হত্যা করেছে নারী ও শিশুসহ ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল ভূমি দখল নয়, এই ইসরাইলি আগ্রাসন এখন পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা ও মানবিক কাঠামোকে ভেঙে দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত বন্ধে প্রয়োজন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষের সমন্বিত কূটনৈতিক চেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রোজেক্টের (এসিএলইডি) তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৩৫ হাজারের বেশি হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এসব হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনে ১৮ হাজার ২৩৫ বার, লেবাননে ১৫ হাজার ৫২০, সিরিয়ায় ৬১৬, ইরানে ৫৮ আর ইয়েমেনে ৩৯ বার হামলা চালানো হয়। গাজায় অব্যাহত বর্বর হামলায় এখনও মানুষের প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৩ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। পশ্চিম তীরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ইসরাইল অভিযান চালিয়ে বহু ভবন ধ্বংস করেছে। গত ২০ মাসে সেখানে প্রায় ১ হাজার জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২শ'র বেশি শিশু।

লেবাননে ইসরাইলি হামলা ও হিজবুল্লাহর পাল্টা আক্রমণের মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ৬শ সংঘর্ষ হয়। যার ৮৩ শতাংশ হামলাই চালায় ইসরাইল। এই লড়াইয়ে হাজার হাজার প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সিরিয়ায় গেল বছরের ডিসেম্বরে আসাদ সরকার পতনের পর থেকে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান দেশটির বিমানঘাঁটি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কৌশলগত অবকাঠামোতে প্রায় ২০০ হামলা চালিয়েছে। এতে সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল, রাজধানী সানায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইসরাইলের বিমান হামলা বেড়েছে। সবশেষ ইরানে ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় নেতানিয়াহু বাহিনী। এই হামলায় ইরানের কৌশলগত সামরিক স্থাপনা, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে তেল আবিব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের এই আঞ্চলিক সামরিক অভিযান বিস্তার মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলের কাছে থাকা অত্যাধুনিক মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে যুদ্ধবিমানগুলো দূরপাল্লার আক্রমণের জন্য বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

একই সঙ্গে ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষও পাল্টা আক্রমণে নিজেদের তৈরি রাখছে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান দ্বন্দ্বকে দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল করে তুলেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষের মধ্যে সমন্বিত কূটনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া অঞ্চলটিতে শান্তি সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকদের।


ইউটি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারিতে রাজউকের ২৩ কর্মকর্তা তলব Jun 26, 2025
img
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর Jun 26, 2025
img
কলম্বো টেস্ট: ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা Jun 26, 2025
img
সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা উন্নত বিশ্বেও নাই : শফিকুল আলম Jun 26, 2025
img
কনার স্ট্যাটাসের এক ঘণ্টা পর ন্যান্সির ‘শেয়াল রাণী’ পোস্ট Jun 26, 2025
img
এনবিআরের ফটক বন্ধ, ঢুকতে পারছেন না ঐক্য পরিষদের নেতারা Jun 26, 2025
img
রামোসের নেতৃত্বে শেষ ষোলো নিশ্চিত করল মন্তেরি Jun 26, 2025
img
ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে সাবেক দুই সিইসিকে গ্রেফতার হতে হয়েছে: বদিউল আলম Jun 26, 2025
img
পূর্বাচলে তিন মাসের বনায়ন কর্মসূচি শুরু করল ডিএনসিসি Jun 26, 2025
img
তিন নির্বাচনে অনিয়ম: বিএনপির মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ ধারা যুক্ত Jun 26, 2025
img
‘পরিকল্পিতভাবে লঞ্চে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে আমার মেয়েকে’ Jun 26, 2025
img
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ সাড়ে ৪ লাখের বেশি Jun 26, 2025
img
মোহিত সুরির পুরনো প্রেমের গল্পে নতুন রঙ ‘সাইয়ারা’ Jun 26, 2025
img
বন্ধ হচ্ছে বিমানের ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট Jun 26, 2025
img
জিরো সয়েল কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা জরুরি : পরিবেশ উপদেষ্টা Jun 26, 2025
ভারতীয় নাগরিককে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বানিয়ে মিথ্যা প্রচারণা Jun 26, 2025
শাহবাগের আন্দোলনে এবার নতুন দাবি যুক্ত করলো চাকরি/চ্যুত বিডিআররা! Jun 26, 2025
img
আন্দোলনের কারণে অবরুদ্ধ রাজস্ব ভবন Jun 26, 2025
img
বুমরাহ ইস্যুতে কঠোর শাস্ত্রী, বললেন ভুল সিদ্ধান্ত নয় Jun 26, 2025
img
নিরাপত্তাহীনতায় লন্ডনে আফ্রি সেলিনা, দেশে ফিরতে চান Jun 26, 2025