আমরা কঙ্গো থেকে অনেক খনিজ সম্পদের অধিকার পেতে যাচ্ছি : ডোনাল্ড ট্রাম্প

রুয়ান্ডা ও কঙ্গো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআরসি) গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এতে দুই দেশ হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ইতি টানতে সম্মত হয়েছে এবং তারা বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়।

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ‘এখনও অনেক কাজ বাকি, তবে এই চুক্তি মানুষকে একটি ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

ডিআরসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কাইকওয়াম্বা ওয়াগনার বলেন, ‘এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা একটি সাধারণ সত্য পুনর্ব্যক্ত করছি—শান্তি একটি পছন্দ, কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়বদ্ধতারও বিষয়।’

চুক্তিটি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে কৃতিত্ব দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, তিনি এখনো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি।

সংবাদমাধ্যমের সামনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কঙ্গো থেকে অনেক খনিজ সম্পদের অধিকার পেতে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, কঙ্গোতে লিথিয়াম ও কোবাল্টসহ বিপুল খনিজ সম্পদ রয়েছে যা বৈদ্যুতিক যানবাহনসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরিহার্য এবং এই খাতে চীন ইতোমধ্যেই শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই সংঘাত সম্পর্কে তেমন জানতাম না। আমি শুধু জানতাম, তারা বহু বছর ধরে একে অপরকে হামলা করছিল। ২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কঙ্গোর স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস মুখওয়েগে চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই চুক্তি কার্যত রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে পুরস্কৃত করছে, কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনকে বৈধতা দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচারকে বলি দিয়ে এক ধরনের ভঙ্গুর ও অস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।’

চুক্তিটি এমন সময়ে হয়েছে, যখন এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী (যাদের রুয়ান্ডার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে) চলতি বছর ডিআরসির পূর্বাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয়। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর গোমাও রয়েছে। যদিও চুক্তিতে এম২৩-এর দখল করা এলাকা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি, তবে এতে রুয়ান্ডাকে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রুয়ান্ডা সরাসরি এম২৩-এর প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তারা ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত হুতু জাতিগোষ্ঠীর স্থাপিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অফ রুয়ান্ডা ( এফডিএলআর)-এর অবসান দাবি করেছে।

নতুন চুক্তিতে এফডিএলআরকে ‘নিষ্ক্রিয় করার’ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ের এনদুহুনগিরেহে বলেন, ‘প্রথম কাজ হবে ‘এফডিএলআর’ নিষ্ক্রিয় করার জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এবং এর সঙ্গে রুয়ান্ডার প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ তুলে নেওয়া।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই অঙ্গীকারের ভিত্তিতে আমরা একটি যাচাইযোগ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এফডিএলআর এবং সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়াদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সমর্থনের অবসান ঘটাব।’

উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে আগ্রহী। ডিআরসি, ইউক্রেনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের খনিজ সম্পদ চুক্তির আদলে একটি খনিজ চুক্তি প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে, রুয়ান্ডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের গ্রহণ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে—যা ট্রাম্পের প্রশাসনিক অগ্রাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রুয়ান্ডা, আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশগুলোর একটি। আগেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি অভিবাসন চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যা নতুন লেবার সরকার বাতিল করে দেয়। চুক্তির মাধ্যমে আফ্রিকার এই সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হলেও এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।


ইউটিি/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছাড়লেন উমামা ফাতেমা Jun 28, 2025
img
নিরাপত্তারক্ষীর দেওয়া তথ্যে শেফালির মৃত্যুতে রহস্য বেড়েছে! Jun 28, 2025
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ওপর চাঁদাবাজির ছোবল Jun 28, 2025
img
‘খলনায়ক’ হয়েই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেছিলেন হানিফ সংকেত Jun 28, 2025
img
টিম ম্যান হিসেবে আমি দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে চাই : তাসকিন Jun 28, 2025
img
‘‘বিচ্ছেদ হয়ে যাবে ভেবেছি’’- বিবাহবার্ষিকীতে আবেগঘন বার্তা অনামিকার Jun 28, 2025
img
প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়ালে বাফুফের ভুল লোগো, সমালোচনার মুখে ফেডারেশন Jun 28, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ১ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪ Jun 28, 2025
img
পাকিস্তানে বিস্ফোরণে ১৩ সেনার মৃত্যু, আহত ২৯ Jun 28, 2025
img
মেসি-পিএসজি : ভুল প্রেমের শেষটা ছিল আশীর্বাদ Jun 28, 2025
img
মহাসমাবেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ৩ দফা দাবি ইসলামী আন্দোলনের Jun 28, 2025
img
যুদ্ধে নিহত ইরানি সেনা ও বিজ্ঞানীদের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল Jun 28, 2025
img
রংপুরের ক্রিকেট গার্ডেনের আউটফিল্ড দেখে হতাশ হলেন বিসিবি সভাপতি Jun 28, 2025
img
ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরাই অর্থনীতি ধ্বংস করেছে : আমীর খসরু Jun 28, 2025
img
সংসার ভাঙল পপতারকা কেটি পেরির! Jun 28, 2025
img
তুরস্কে ভিন্ন রূপে রুনা খান, ঘুরলেন অটোমান প্রাসাদ Jun 28, 2025
img
আমরা জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে চাই : রিজভী Jun 28, 2025
img
বাংলাদেশ ১ নম্বর দল হতে পারবে না কেন, প্রশ্ন বুলবুলের Jun 28, 2025
img
হিজরি নববর্ষের প্রথম জুমায় যা বললেন মসজিদুল হারামের খতিব Jun 28, 2025
img
রাজধানীতে প্রথম ধাপে দুটি জোনে ই-রিকশা চালু করা হবে : আসিফ মাহমুদ Jun 28, 2025