দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত বিরোধকে ‘জটিল’ আখ্যা দিয়েছে চীন। তবে একইসঙ্গে তারা জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত নির্ধারণে আগ্রহী বেইজিং এবং এটি সময়সাপেক্ষ হলেও আলাপ-আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।
এমন মন্তব্য এসেছে সম্প্রতি চীনের কিংদাও শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুনের বৈঠকের পর।
সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কাঠামোবদ্ধ পন্থার ওপর জোর ভারতের
রাজনাথ সিং এ বৈঠকে সীমান্ত ইস্যুকে পরিষ্কার, কাঠামোবদ্ধ উপায়ে সমাধানের ওপর জোর দেন। তিনি বিশেষভাবে বলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা প্রশমনের জন্য চীনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আগের চুক্তিগুলো পুনরুজ্জীবিত করে সীমান্ত নির্ধারণে সহায়তা করতে হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-র বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
চীনের অবস্থান: আলোচনা চলবে
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চালাতে চীন প্রস্তুত। তিনি বলেন, “চীন ও ভারত ইতিমধ্যে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা পরিচালনার জন্য ‘স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভস মেকানিজম’ চালু করেছে এবং এই বিষয়ে পথনির্দেশক নীতিতেও একমত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সীমান্ত সমস্যা নিঃসন্দেহে জটিল এবং এর সমাধানে সময় লাগবে। তবে দুই দেশ ইতোমধ্যে একাধিক স্তরে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং চীন ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।”
বিশ্বাস পুনর্গঠনে গুরুত্ব
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর মধ্যে ‘স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ’ পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালে লাদাখ সংঘর্ষের পর এটি ছিল প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। ওই বৈঠকে অক্টোবর ২০২৪ সালে স্বাক্ষরিত সেনা বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মত হয় দুই পক্ষ, যার আওতায় কিছু বিতর্কিত এলাকায় টহল ও পশুপালনের অনুমতি দেওয়া হয়।
চীনের ডং জুনের সঙ্গে বৈঠকে রাজনাথ সিং ২০২০ সালের সীমান্ত উত্তেজনার পর ‘সুপ্রতিবেশী সম্পর্ক’ গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। তিনি চীনকে জানিয়ে দেন, জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়েছে, যা পাকিস্তানে অবস্থানরত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে।
সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, আলোচনার আহ্বান চীনের
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা সমাধানে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাও নিং বলেন, “আমরা আশা করি ভারত যোগাযোগ চালু রাখবে এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনাথ সিং ও ডং জুনের এই বৈঠক ভারত-চীন সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বরাবর উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে।
সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের এই উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ, আস্থা পুনর্গঠন এবং সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে।
এফপি/ টিএ