পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে নির্বাচন হয় খুব নিকটবর্তী অথবা দূরবর্তী : জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এই উত্তাপের কেন্দ্রে এবার জামায়াত তাদের দীর্ঘ সময়ের নিষ্ক্রিয়তা ভেঙে ১৯ জুলাই মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে। এই সমাবেশ শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় বরং একটি কৌশলগত বার্তা। তারা বলছে— ভোটের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না।


তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠ এখনো একতরফা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নানা ছলচাতুরীতে নির্বাচনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জামায়াত এবার তাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার করে বলেছে, নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে তারা ভোটে যাবে না। তারা ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনের ব্যাপক রদবদলের দাবি জানাচ্ছে।

ভোটার তালিকা এখনো হালনাগাদ হয়নি। শুধু নিজেরাই নয়, সম্ভাব্য দল এবং জোটগুলোকেও এই দাবি আদায়ের লড়াইয়ে যুক্ত করতে যাচ্ছে তারা।’

‘জামায়াত নিরাপদ ভোটের পরিবেশ, সমান সুযোগ এবং মৌলিক সংস্কার এই তিন শর্তকে বারবার উচ্চারণ করছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক কাঠামো, সহিংসতা ও অপশক্তি নিয়ন্ত্রণ সবকিছুতেই তাদের প্রশ্ন।

এই প্রশ্নের উত্তরে না মিললে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তৃতীয়বার ভাববে না বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই সমাবেশে শুধু দলীয় শক্তি নয়, তারা তাদের রাজনৈতিক বার্তা সবার সামনে নিয়ে যেতে চায়। এজন্যই তারা বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। জামায়াত চাইছে এই সমাবেশ হোক একটা সম্মিলিত বার্তা।’

‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা, রাজনৈতিক হত্যা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির খবর প্রতিনিয়ত আসছে।

খুলনায় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুব রহমানকে প্রকাশ্যে গুলি করে এবং পরে পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী খুন, ঢাকার মিটফোর্ডে পাথর চাপা দিয়ে মানুষ হত্যা, জামালপুরে অজ্ঞাত লাশ, কিশোরগঞ্জে শিশুর মরদেহ উদ্ধার। এসব ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতার এক ভয়ংকর আলামত।’

‘এসবের মধ্যেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো নির্বাচন হবে কিনা। আর হলেও সেটা কাদের অংশগ্রহণে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। জামায়াত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এখন দেখার বিষয়ে অন্যরা কিভাবে সাড়া দেয়? আর সরকার ও নির্বাচন কমিশন এই প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত কিনা? যতদিন এগুচ্ছে নির্বাচন শুধু সময়ের হিসাব নয়, এটি হয়ে উঠছে ন্যায্যতার, সাহসের এবং জবাবদিহির লড়াই। তবে একথা ঠিক, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে নির্বাচন হয় খুব নিকটবর্তী অথবা দূরবর্তী। মাঝামাঝি যারা যে স্বপ্ন দেখছেন বা যে মাসগুলোর কথা উচ্চারিত হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে, এপ্রিলে, জুনে আমার মনে হয় না নির্বাচন এই মাসগুলোতে হবে। হয় নির্বাচন অনেক আগে হবে, না হয় নির্বাচন অনেক পরে হবে। রাজনৈতিক বাস্তবতা সে কথাই বলছে।’

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আলভারেজ বিতর্কের পর ফুটবলে পেনাল্টির নিয়মে বড় পরিবর্তন Sep 18, 2025
img
৩ বছর পরে হাবিবের জন্য নতুন গান লিখলেন অলিক Sep 18, 2025
img
বায়ার্নকে জেতানো ম্যাচে রেকর্ড গড়লেন কেইন Sep 18, 2025
img
কানাডায় খালিস্তানপন্থিদের ভারতীয় দূতাবাস দখলের হুমকি Sep 18, 2025
img
কলকাতায় বাধ্যতামূলক করা হলো বাংলা সাইনবোর্ড Sep 18, 2025
img
বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার অবস্থান কত? Sep 18, 2025
img
রোনালদোকে ছাড়াই আল-নাসরের দুর্দান্ত জয় Sep 18, 2025
img
‘নারী সালমান খান’ হতে চান ধনশ্রী ভার্মা Sep 18, 2025
img
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যুগান্তকারী সমঝোতা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের Sep 18, 2025
img
নাসুমের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেন বুলবুল Sep 18, 2025
img
হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় লিবিয়া যাচ্ছেন বাংলাদেশি প্রতিনিধি Sep 18, 2025
img
রাইস ব্রান অয়েল রফতানিতে নতুন শুল্ক, ২০% হারে নিয়ন্ত্রণ Sep 18, 2025
img
নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন আশিস কাপুর Sep 18, 2025
img
ভোলায় পুলিশের নামে চাঁদাবাজি, ২ যুবক গ্রেপ্তার Sep 18, 2025
img
হানিয়ার সঙ্গে দেখা করার স্বপ্ন এখন হাতের নাগালে! Sep 18, 2025
img
এশিয়া কাপে সুপার ফোরে আবারও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান! Sep 18, 2025
img
ঢাকায় দিনের শুরুতে থাকবে আংশিক মেঘলা, হতে পারে হালকা বৃষ্টি Sep 18, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলামের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Sep 18, 2025
img
তাহসানের লিরিক্সে রোজার মুঠোবন্দি রোমান্টিক ছবি পোস্ট Sep 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন মাত্রা Sep 18, 2025