রাজু ভাস্কর্যে হাসিনার ছবি পোড়াল বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ

চব্বিশের জুলাই গণহত্যাকারী পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি ও তার ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।

সোমবার (১৪ জুলাই) জুলাই বিপ্লব দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত এনে দ্রুত বিচারের দাবিও জানান সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফাহাদ প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, ঢাকা আলিয়া শাখার সদস্য সচিব মো. জিনাত হোসাইন, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব শরিফ খান, সদস্য মো. ইব্রাহিম প্রমুখ।

সমাবেশে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজকে ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ ট্যাগ দেন। এর মাধ্যমে তিনি ১৬ বছরের অপবাদ ও নিপীড়নের কৌশল প্রয়োগ করে আমাদের দমন করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ছাত্র সমাজ তার অপবাদকেই ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। এর মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয় ও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যায়।

আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ১৯৪৭ সালের উপনিবেশ বিরোধী স্বাধীনতা, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী চব্বিশের নাগরিক স্বাধীনতা সমান গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই বিপ্লব থেকে জন্ম নেওয়া ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমাদের সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ প্রতি বছর জুলাই বিপ্লবকে উদযাপন করব। এর অংশ হিসেবে আমরা ১৪ জুলাইকে বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করছি।

ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, শহীদের রক্ত যেই সরকারের ন্যায্যতা সেই সরকারের মাঝে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না মুজিববাদী সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগকে বিচার করার। জুলাই বিপ্লব দিবসের আজকের এই দিনে আমরা সারা দেশের সব ছাত্র জনতাকে উদাত্ত আহ্বান জানাই সকলেই যেন গণহত্যার সাথে জড়িত সব অপরাধীর বিচারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের ১ বছরের মাথায় এসে বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে তারা খুনি হাসিনার সুরকে নকল করে আবারো নতুন খেলায় মেতেছে। হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলায় শিক্ষার্থীরা বুলেটের সামনে দাঁড়াতে ভয় পায়নি। অথচ ঠিক হাসিনার মতোই বর্তমানে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, আল বদরের বাচ্চা বলে গালাগালি করছেন। বর্তমানে কেউ যদি মনে করে সে হাসিনা হতে পারবে তা হলো চূড়ান্ত ভুল। এদেশের ছাত্র-জনতা আর কাউকে হাসিনা হতে দেবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের ১১ মাস ৯ দিন অতিবাহিত হয়েছে অথচ গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্যণীয় নয়। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের গুন্ডারা এখনো আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু আমরা দেখছি ফ্যাসিস্ট লীগের গুন্ডাদের ধরে আইনের কাছে সোপর্দ করায় বিপ্লবী জনতার ওপর পুলিশ চড়াও হয়।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম দায়সারাভাবে নিষিদ্ধ করে ক্ষান্ত হয়েছে। কিন্তু হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়া হয় নাই। তাই আমরা ছাত্র সমাজ বিক্ষুব্ধ। আমরা চাই হাসিনার সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি কার্যকর এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ।

জিহাদী ইহসান বলেন, জুলাই বিপ্লবের ১১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও গণহত্যার বিচার পাইনি। শহীদের রক্তের হিস্যা পাইনি। ১৬৮জন পথশিশুর রক্তের হিস্যা পাইনি, তাদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়নি। একটা জনবচ্ছিন্ন এনজিও সরকার বসিয়েছে যারা জুলাইয়ের রক্ত ওউন করে না। এদেশের মানুষের কাতারে তারা কখনো দাঁড়ায়নি, যারা ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বকে ওউন করে।

তিনি বলেন, ছাত্র উপদেষ্টারা বিএনপি জামায়াত ডিজিএফআইয়ের কাছে জুলাই বর্গা দিয়ে আসছে। জনতাকে ত্যাগ করে, তাদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এজেন্সির কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আওয়ামী লীগের স্লোগান একটা রাজনৈতিক দল নিজেদের করে নিয়ে দিল্লির আধিপত্যবাদকে এস্টাবলিশমেন্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইপিএলের ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে দিচ্ছে ২৬ ক্রিকেটারকে Nov 14, 2025
img
ভারতের আধিপত্য বাংলার মানুষ আর গ্রহণ করবে না : তাহের Nov 14, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ী শক্তিই নির্ধারণ করবে গণভোট কেমন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 14, 2025
img
গণভোটসহ ৫ দফা দাবি জামায়াত ও ইসলামী ৮ দলের Nov 14, 2025
img
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সামলেছিল ছাত্রশিবির মেডিকেল জোন : ডাকসু ভিপি Nov 14, 2025
img
আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে সরকারের ২৮ কোটি টাকার অনুমোদন Nov 14, 2025
img
আগামীর গণভোট কেমন হবে, জুলাইয়ের বিজয়ীরা নির্ধারণ করবে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 14, 2025
img

আমীর খসরু

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি Nov 14, 2025
img
নাশকতার অভিযোগে কুড়িগ্রাম পুলিশের হাতে আকট ৫১ Nov 14, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের আশ্বাসে খেলতে রাজি হলো শ্রীলঙ্কা Nov 14, 2025
img
আপনারা সংখ্যালঘু না, কেউ আপনাদের সম্পত্তি দখল করতে পারবে না : মান্নান Nov 14, 2025
img
বিএনপি ও জামায়াতের কথামতো হয়েছে সনদ: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 14, 2025
img
বারবার ধোকা দিয়ে দেশকে সুন্দর করা যাবে না : রেজাউল করীম Nov 14, 2025
img
বাংলাদেশে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাকিস্তান Nov 14, 2025
img
শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন: জয়নুল আবদিন Nov 14, 2025
img
যুবদল নেতার হামলায় আহত ৩ পুলিশ Nov 14, 2025
img
শাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে আ. লীগের ককটেল ফ্যাক্টরির সন্ধান, অভিযান পুলিশের Nov 14, 2025
img
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে ‘জবরদস্তিমূলক হস্তক্ষেপ’ নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 14, 2025
img
১০০তম টেস্টের পরও খেলা চালিয়ে যাবেন মুশফিক, আশা করেন শান্ত Nov 14, 2025