স্বাদে তেতো করলা গুণে অনন্য

করলা, এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়। করলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia, যা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, যা ১৪শ শতাব্দীতে চীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

করলা দেখতে সুন্দর হলেও তেতো স্বাদযুক্ত, তবে মানবস্বাস্থ্যের জন্য এই সবজি অনেক উপকারী। হাজার বছর ধরে এটি ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

সম্প্রতি জাপানি বিজ্ঞানীদের করা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখে গেছে, বর্তমান সময় যে যে মরণব্যাধি রোগ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তা প্রতিরোধে করলার বিকল্প নেই। তবে তার জন্য প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে কাঁচা করলা খাওয়া প্রয়োজন।

প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ৩.৭০ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৭ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২.৮০ গ্রাম, নায়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম, প্যান্টোথেনিক এসিড ০.২১২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ৪৭১ আই ইউ, ভিটামিন-সি ৮৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৩৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজৎ ০.০৮৯ মিলিগ্রাম, জিংক ০.৮০ মিলিগ্রাম।

যা শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধক দেয়াল এতটাই পাকাপোক্ত করে, যেন ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

এ তো গেল তাত্ত্বিক কথা; আসুন জেনে নেই নিয়মিত করলা খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ এড়ানো যায়-

লিভার ফাংশনের উন্নতি ঘটে
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ভিটামিন অ্যান্ড নিউট্রিশন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে, করলা খাওয়া মাত্র শরীরে বিশেষ কিছু এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে রোজের ডায়েটে করলাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ এই সবজিটিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরের প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে বলিরেখা গায়েব হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। ফলে স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
প্রতিদিনের ডায়েটে করলাকে অন্তর্ভুক্ত করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ নিমেষে হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে সংক্রমণ বা ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে
করলায় বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখে। ফলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

পেটের রোগের প্রকোপ কমে
করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি নানাবিধ স্টমাক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফাইবার শরীরে প্রবেশ করা মাত্র গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে নানাবিধ পেটের রোগের লক্ষণ কমতে শুরু করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নত ঘটে
কাঁচা করলা অথবা করলার রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে প্রচুর মাত্রায় বিটা-ক্যারোটিনের প্রবেশ ঘটে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
করলার রস লিভার ফাংশন বাড়ানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায়। আর একবার যদি হজম ঠিক মতো হতে থাকে, তাহলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: