অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত নজরদারির মেয়াদ বাড়াচ্ছে জার্মানি

অবৈধ বা অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে রয়েছে জার্মানি। এই নজরদারির সময়সীমা সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আবার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।

জার্মান সংবাদমাধ্যম টেবিল ডট টুডে-র এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট। বৃহস্পতিবার এই পডকাস্ট প্রচারিত হয়েছে।

তিনি বলেছেন, তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতেও কাজ করছে সরকার।

জার্মানির রক্ষণশীল চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জার্মান রাজনীতিতে অতি ডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র উত্থান ঠেকানোর এটিই একমাত্র উপায়।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মান পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় দলগুলোর প্রচারেও অভিবাসন ইস্যুটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। নির্বাচনে এএফডি ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। তবে এএফডি-কে নিয়ে সরকার গঠন থেকে বিরত থাকলেও অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর সব পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে সিডিইউ/সিএসইউ এবং এসপিডি-র জোট সরকার।

২০২৪ সাল থেকে প্রতিবেশী নয়টি দেশের সঙ্গে থাকা সীমান্তে নজরদারি শুরু করে জার্মানি। অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ওই সময়ের চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ বছরের মার্চে সবশেষ সীমান্ত নজরদারির মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছিলেন শলৎস।

বার্লিনে স্কুলে অভিবাসী শিশুদের ঠাঁই নেই

জার্মানির নতুন রক্ষণশীল চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস দায়িত্ব নিয়ে সেই নজরদারি অক্ষুণ্ণ রেখে আরো কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। এমনকি জার্মান সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার মতো কঠোর অবস্থানও নিয়েছে বর্তমান সরকার। এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আপত্তি জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোও; কিন্তু সেসব আমলে নেয়নি ম্যার্ৎস প্রশাসন৷

চলমান এই নজরদারি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট বলেছেন, “১৫ সেপ্টেম্বরের পরেও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখা হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে একমত হয়েছি। ইইউর বহিরাগত সীমান্তের সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত, এর (সীমান্ত নজরদারি) প্রয়োজন রয়েছে।”

সন্ত্রাসবাদের হুমকি বা অনিয়মিত অভিবাসনপ্রবাহের মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে শেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলো দুই বছর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে নিজেদের সীমান্তের সুরক্ষায় নজরদারি করতে পারে।

সীমান্তে পুলিশি তল্লাশিকে গতিশীল করতে এখন প্রতিদিন ১৪ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করছে জার্মানি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ৮ মে থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জার্মানির সীমান্ত থেকে নয় হাজার ২৫৪ জন অভিবাসীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব অভিবাসীদের মধ্যে সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। এরপরেই আছেন আলজেরিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়ার নাগরিকেরা।

ফ্রান্সের সঙ্গে থাকা সীমান্ত থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসীকে প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি। সংখ্যাটি দুই হাজারেরও বেশি। এরপর আছে পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ার সঙ্গে থাকা সীমান্ত।

এর মধ্যে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আফগান নাগরিকদের প্রত্যাবাসন শুরু করেছে জার্মানি। গত মাসে দুই দফায় ৮১ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে৷ সংস্থাটি বলেছে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর' এবং দেশটিতে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতন সাধারণ বিষয়'।

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য নিজেদের সিদ্ধান্ত অনড়। তিনি বলেছেন, সিরিয়ায় নির্বাসন ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাজ করছে বার্লিন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতন হয়। এরপর থেকেই সিরিয়া ইস্যুতে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। সিরিয়াকে এখন নিরাপদ ঘোষণা করে দেশটি থেকে আসা অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে চায় জার্মানি, অস্ট্রিয়াসহ ইইউর সদস্য দেশগুলো।

 পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বগুড়ার ধুনটে আ.লীগের ১০৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা Dec 11, 2025
img
জিরা আমদানি ৩৫৬ টন কমায় কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা Dec 11, 2025
img

জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলন

প্লাস্টিক দূষণ রোধে শক্তিশালী বৈশ্বিক উদ্যোগের দাবি বাংলাদেশের Dec 11, 2025
img
তফসিল ঘোষণার পর কি পরিবর্তনের সুযোগ আছে? Dec 11, 2025
img
তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী রানা হত্যার বিচারের দাবিতে ফার্মগেট অবরোধ Dec 11, 2025
img
বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন ডিজিটালাইজেশন করতে নির্দেশ হাইকোর্টের Dec 11, 2025
img
তফসিল ঘোষণার পর কোন কোন বিষয় স্পষ্ট করা হয়? Dec 11, 2025
img
দর্শক সবসময় নায়কনির্ভর গল্প চায় না : নুসরাত ভারুচা Dec 11, 2025
img
হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২য় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Dec 11, 2025
img
ভোটে জিততে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে : মির্জা ফখরুল Dec 11, 2025
img
অবশেষে রিশাদের গায়ে হোবার্টের জার্সি Dec 11, 2025
img
দ্বিতীয় সন্তান হারানোর স্মৃতিতে কাতর গোবিন্দ-সুনীতা Dec 11, 2025
img
রম্যা নয়, রজনীকান্তের প্রথম পছন্দ ছিলেন ঐশ্বরিয়া Dec 11, 2025
img
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সিক্সজি’ মন্তব্যে ফের সমালোচনার ঝড় Dec 11, 2025
img
ক্যারিবীয় ব্যাটিংয়ে ধস নামানো পেসার ছিটকে গেলেন ম্যাচ থেকে Dec 11, 2025
img
লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতির কা‌ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ Dec 11, 2025
img
চীনে প্রবেশে নতুন নিয়ম, ফ্লাইটে ওঠার আগেই নিতে হবে ‘অ্যারাইভাল কার্ড’ Dec 11, 2025
img
গর্তটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট, ফায়ার সার্ভিস পৌঁছেছে কেবল ৩০ ফুট Dec 11, 2025
img

সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র

শওকত মাহমুদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি আজ Dec 11, 2025
img
সাজিদের খোঁজে ৪৫ ফুট গভীরে ফায়ার সার্ভিস, এখনো হয়নি শনাক্ত Dec 11, 2025