গত ছয় বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী প্রায় ২০ শতাংশ কমে সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজারে। গতকাল রোববার দেশটির ক্ষমতাসীন দলের এক এমপির প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এ হ্রাসের প্রধান কারণ দেশটির উদ্বেগজনক নিম্ন জন্মহার। বর্তমানে দেশটিতে একেকজন নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার গড় হার মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫। অর্থাৎ দেশটিতে দুজন নারী ও পুরুষ মিলে একজন শিশুও জন্ম দিতে পারছেন না। শিশু জন্মের এই হার বিশ্বে সর্বনিম্ন।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনো বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা চালু রয়েছে। কারণ, দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।
চলতি বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকদের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করতে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তত ৫ লাখ সেনা প্রয়োজন। বর্তমান সেনাসংখ্যা এই লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকায় দেশটি প্রতিরক্ষায় কাঠামোগতভাবে কঠিন অবস্থানে রয়েছে বলে ওই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে ৫৯টি ডিভিশন ছিল। কিন্তু এখন এই সংখ্যা কমে ৪২-এ দাঁড়িয়েছে। অনেক ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে বা একীভূত হয়েছে।
এদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ায় দেশটি প্রতিরক্ষা বাজেটও বাড়াচ্ছে। ২০২৫ সালে দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট দাঁড়িয়েছে ৪৩ বিলিয়ন ডলারে, যা উত্তর কোরিয়ার মোট জিডিপির চেয়েও বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সক্ষম সব পুরুষকে ১৮ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। ব্যবস্থাটি দেশটির অনেক তরুণের কাছে অজনপ্রিয়। কারণ, এটি তাদের কর্মজীবনে বিঘ্ন ঘটায় বলে মনে করেন সমালোচকেরা।
দক্ষিণ কোরিয়া বারবার বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহারের রেকর্ড ভাঙছে। ২০১৮ সালে দেশটির মাপ্রতি শিশু জন্মহার ছিল শূন্য দশমিক ৯৮, ২০২০ সালে শূন্য দশমিক ৮৪, ২০২৩ সালে শূন্য দশমিক ৭২ ও ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ৭৫। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ৫ কোটি জনসংখ্যার দেশটির জনসংখ্যা ৬০ বছরের মধ্যে অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করেছেন।
এমআর/টিকে