ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে আবাসিক হলের রিডিংরুমে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, হলের রিডিংরুমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার (২৪ আগস্ট) প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন কবি জসীম উদ্দীন হলের শিক্ষার্থী শাহ জামাল।
তিনি দাবি করেন, আবিদুল ইসলাম খান রিডিংরুমে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয়, কুশল বিনিময় ও দোয়া প্রার্থনার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে আবিদুল ইসলাম খান অমর একুশে হলের রিডিংরুমে প্রবেশ করেন।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ এর নির্বাচনী বিধিমালা ৬ এর (চ) অনুযায়ী ‘পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো স্থানে (যেমন– শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ, পরীক্ষার হল ইত্যাদি) সভা/সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ও করিডোরে মিছিল করা যাবে না।’ এই বিধিমালা অনুযায়ী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
এদিকে, আচরণবিধি ১৭ এর (ক) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনে স্বপ্রণোদিতভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবেন। নির্বাচনী বিধিমালা ১৭ এর (খ) অনুযায়ী ‘কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
শাহ জামাল অভিযোগপত্রে লেখেন, অতি সম্প্রতি অর্থাৎ গত ২১ আগস্ট থেকে আজকের দিন পর্যন্ত (চলমান) ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইস্যু করা একাধিক বিজ্ঞপ্তি উপেক্ষা এবং অবজ্ঞা করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। যা ডাকসু নির্বাচনি আচরণবিধি ৪(খ)-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন, ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একই আচরণবিধি ৪ (ক) -এরও লঙ্ঘন প্রতীয়মান হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই প্রার্থীর এমন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড ভোটারদের শঙ্কিত ও বিব্রত করছে।
অভিযোগপত্রে শাহ জামাল এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে উল্লিখিত প্রার্থীসহ আরও যে বা যারা এমন নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিষয়ে অবিলম্বে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা অভিযোগের বিষয়টি দেখে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অভিযোগ সম্পর্কে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমার এক ছাত্র ওই হলে থাকায় সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা হলে খাওয়াদাওয়া করেছি। আমার ছাত্র ডাকল, ভাই আমাদের লাইব্রেরিটা (রিডিংরুম) একটু দেখে যান। যার ফলে আমি লাইব্রেরিটা জাস্ট দেখেছি, অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তখন সবাই আমার দিকে তাকানোয় কুশল বিনিময় করেছি। একটি ছেলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার কারণে যদি নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, তাহলে তো নির্বাচন কমিশনের উচিত প্রার্থীদেরকে প্রচারণার আগে বাড়ি থেকে বের হবেন না বলা।
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে এটা কোনোভাবেই নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের মতো কোনো অনুভূতি আমার ভেতরে হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আচরণবিধি লঙ্ঘন মনে করবে না। যারা রাজনৈতিকভাবে আমাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা আমাদের পেছনে থেকে অপপ্রচার ও অভিযোগ করার চেষ্টা করেছে।
এসএন