বাংলাদেশের সর্বউত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে আবারও চোখের সামনে ধরা দিল বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পরিষ্কার নীল আকাশের পটভূমিতে বরফে মোড়ানো বিশালাকার এই পাহাড় হঠাৎ করেই উঁকি দেয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ কয়েক মিনিটের জন্য হলেও উপভোগ করেছেন এই অপার্থিব দৃশ্য।
এর আগের দিন সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ও বিকেলেও আংশিকভাবে দেখা গিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে মঙ্গলবারের দৃশ্য ছিল আরও স্পষ্ট, দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা এক বিরল ঘটনা। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং তখনই সহজে দেখা মেলে এই পর্বতশৃঙ্গের। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শুরুতেই টানা দুদিন এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারায় স্থানীয়দের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে।
চাকলাহাট এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি বছরই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য অপেক্ষা করি। সাধারণত শীতের সময় ভালোভাবে দেখা যায়। কিন্তু এবার এত তাড়াতাড়ি দেখা মিলবে ভাবিনি। বিকেলে হঠাৎই পাহাড়ের চূড়াটা দেখা গেল। মনে হচ্ছিল, হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলব। সত্যি, এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
জালাসী এলাকার শিরিন আক্তার বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সাদা বরফে মোড়া পাহাড়টা এত সুন্দর লাগছিল যে মনে হচ্ছিল, একেবারে হাতের কাছেই আছে। কয়েক মিনিটের জন্য হলেও আমরা খুব আনন্দ পেয়েছি। আমার বাচ্চারা তো খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে।
হাফিজাবাদ গ্রামের কৃষক নাঈম বলেন, ক্ষেতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আকাশটা অন্যরকম লাগছে। তাকিয়ে দেখি সাদা বরফে ঢাকা বিশাল এক পাহাড়। জীবনে কত কষ্ট করি, কিন্তু এই দৃশ্য কয়েক মিনিট দেখেই মনে হলো সব ক্লান্তি চলে গেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বর্তমানে আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। গরম ও ঠান্ডা আবহাওয়ার মিশ্রণের কারণে গত দুদিন আকাশ পরিষ্কার ছিল। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে আবারও মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হতে পারে। তবে অক্টোবর থেকে আকাশ তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকে।
তখন প্রায় প্রতিদিনই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
প্রতিবছর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া অঞ্চল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ভিড় করেন এই পর্বতের ঝলক দেখার জন্য। বিশেষ করে ভোরবেলা কিংবা বিকেলের শেষ প্রহরে সূর্যের আলোয় বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়াগুলো যখন সোনালি রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন দৃশ্যটি হয়ে ওঠে স্বপ্নময়।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বর্ষার শুরুতেই কাঞ্চনজঙ্ঘার এমন ঝলক পর্যটনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এমকে/এসএন