গুণে ধনী ধনে পাতা

ধনে পাতার স্বাদ ও গন্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন না এমন ব্যক্তি কমই আছে। প্রায় সব ধরনের তরকারিতেই ধনে পাতা স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে; সেই সঙ্গে যুক্ত করে অসাধারণ ঘ্রাণ। পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টিগুণের বিচারে ধনেপাতা একটি সুগন্ধিময় ওষধি গাছ।

ধনিয়া পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum, এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ধনের বীজ খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, ধনিয়া পাতার রয়েছে- ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরনের অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য ফাইবার, ম্যাংগানিজ আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ফসফরাস, ক্লোরিন ও প্রোটিন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং যেকোনো চুলকানি ও চামড়ার জ্বলনে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।

স্কিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ধনে পাতা রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রূপচর্চায়ও দারুণ কাজ দেয়। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসাবে ধনে পাতা দারুণ কার্যকর। যাদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তারা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনে পাতার রসের সঙ্গে দুধের রস মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এক মাস লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে, আর ঠোঁটও কোমল হবে।

চলুন জেনে নিই নিয়মিত ধনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা-

  • ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কারণ এতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা শূন্য।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্যে ধনে পাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।
  • ধনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখে আলসার নিরাময়েও উপকারী, চোখের জন্যেও ভালো।
  • ঋতুস্রাবের সময় রক্তসঞ্চানল ভালো হওয়ার জন্যে ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

  • ধনে পাতায় থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী।
  • ধনে পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন –অ্যাসকরবিক এসিড, বিটা ক্যারেটিন, ম্যাংগানিজ পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
  • এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা বাতের ব্যথাসহ হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে।
  • স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ (স্নায়ু) সচল রাখতে সাহায্য করে ধনে পাতা।
  • ধনে পাতার ভিটামিন-কে অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
  • ধনে পাতায় এসেনশিয়াল অয়েল লিনোলেয়িক এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে, যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আথ্র্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা। ধনে পাতায় উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়োটিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর।

  • এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসাস, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন ‘সি’ এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।

সতর্কতা: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধনেপাতা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। চোখের দৃষ্টি ক্ষতি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির সংবেদনশীলতা বা সানলাইট সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে এবং অত্যধিক মাত্রায় খাওয়া হোলে সানবার্ন হতে পারে। অবশ্য আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধনে পাতা সেবন করি তা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না। অতিমাত্রায় রস সেবন করলেই ক্ষতির কারণ হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: