রোগ-ব্যধির যম তুলসী

তুলসী সবুজ রঙের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা, বীজ, ডালপালা সবই মানুষের উপকারে লাগে। শীতে সর্দি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বরজ্বর ভাব দূর করার জন্য তুলসী পাতার রস ভীষণ উপকারী। এমনকি এই রস দেহে ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ব্রিটিশরা যখন ভারতে পা রাখে তখন মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে তুলসীর শরণাপন্ন হয়। তারা বাংলোর চারদিকে তুলসী ও নিমের গাছ লাগিয়ে ছিল। তারা একে বলত 'মসকিউটো প্লান্ট'।

তুলসী এর ইংরেজি নাম Holy basil এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ocimum basilicum Linn। তুলসী সাধারণত একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২-৪ ফুট উঁচু ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ১-৩ ইঞ্চি লম্বা হয়।

আয়ুর্বেদে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় তুলসী পাতা। চুল ও ত্বকের চিকিৎসার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মতো কাজে তুলসী পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

ভরতের বৈদ্যনাথের ক্লিনিকাল অপারেশনস অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার ডা. আশুতোষ গৌতমের মতে,‘তুলসীর তেল কার্যকরিভাবে আমাদের শ্বাসযন্ত্রের উপর কাজ করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা চাপ হ্রাস করতে, স্নায়ুকে শান্ত করতে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তুলসীতে লিনোলেইক অ্যাসিড রয়েছে, যা চামড়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

চলুন জেনে নিই তুলসী পাতার যত জাদুকরী গুণ-

রক্ত পরিশুদ্ধ হয়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ টি তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান ও টক্সিন শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

ডায়াবেটিস দূরে থাকে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।

ক্যান্সার দূরে থাকে
তুলসী পাতায় উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের ভেতরকার ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারের কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না।

স্ট্রেস কমায়
তুলসী পাতা খাওয়া মাত্র কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করে। কারণ কর্টিসল হরমোনের সঙ্গে স্ট্রেস-এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমাতেও তুলসী পাতা দারুণভাবে সাহায্য করে।

মাথা যন্ত্রণা কমায়
সিডেটিভ ও ডিসইনফেকটেন্ট প্রপাটিজ থাকার কারণে তুলসী পাতা যেকোনো ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
একাধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি ও গ্লুকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকাতেও সাহায্য করে।

সর্দি–জ্বরের প্রকোপ কমায়
তুলসী পাতা হল প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। তাই তো জ্বর ও সর্দি-কাশি সারাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে তুলসী পাতা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র যে যে ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়েছে, সেই জীবাণুগুলোকে মারতে শুরু করে। ফলে শরীর ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

ব্রণের প্রকোপ কমে
তুলসী পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুদের সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে। ফলে ব্রণের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

পোকার কামড়
তুলসী পাতা হলো প্রোফাইল্যাক্টিভ, যা পোকামাকড় কামড় দিলে উপশম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে কামড়ের ব্যথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: